গাজীপুরের কালীগঞ্জে দুধ চুরির টাকার ভাগ চাওয়ায় এক এগ্রোফার্মের রাখালকে খুন করেছে তার সহকর্মীরা। খুন করার পর খুনিরাই নিহতের লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঘটনার প্রায় দুই বছর পর রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় জড়িত তিন যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- নরসিংদী সদর থানার দক্ষিণ পুরানপাড়া এলাকার ফাইজ উদ্দিন মিয়ার ছেলে আজিজুল হক (২০), একই এলাকার হিরু মিয়া ওরফে ভাসানীর ছেলে ইয়াসিন মিয়া (৩৯) এবং একই জেলার শিবপুর থানার সৈয়দনগর এলাকার সফিকুল ইসলামের ছেলে মোঃ আবির (১৬)। নিহত রিয়াজ উদ্দিন (৩৫) গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানাধীন জামালপুর (হাজীপাড়া) এলাকার নাজিম উদ্দিনের ছেলে। তারা সবাই গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানাধীন ফুলদি এলাকার সাইফ এগ্রোফার্মে রাখাল হিসেবে কাজ করত।
পিবিআই’র ওই পুলিশ সুপার জানান, ওই খামারের দুধ বিক্রি থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজের দেখাশুনা করত ইয়াসিন। সে প্রতিদিন দুধ বিক্রির টাকা থেকে একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা গোপনে রেখে দিত। রিয়াজ উদ্দিন বিষয়টি জানতে পেরে ইয়াসিনের কাছে দুধ চুরির টাকার অর্ধেক ভাগ দাবী করে। নতুবা খামারের মালিককে জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রিয়াজকে কুনের পরিকল্পনা করে ইয়াসিন, আবির ও আজিজুল হক। পরিকল্পনা অনুযায়ী দু’দিন পর ২০২০ সালের ২৮ জুন বিকেলে হাঁস আনতে রিয়াজকে সঙ্গে নিয়ে ইয়াসিন ড্রাম নিয়ে সাঁতার কেটে খামার সংলগ্ন বিলের মধ্যে যায়। এসময় আজিজুল ও আবির বিলের পাড়ে দাঁড়িয়ে পাহাড়া দিচ্ছিল। বিলের মাঝে যাওয়ার পর ইয়াসিন সুকৌশলে তার হাতে থাকা কাঠের লাঠি দিয়ে রিয়াজের মাথায় একাধিকবার আঘাত করে। এতে পানিতে ডুবে নিহত হয় রিয়াজ। পরে ইয়াসিন পাড়ে ফিরে এসে ফিরে এসে অন্যদের জানায় রিয়াজ পানিতে তলিয়ে গেছে। ইয়াসিন সহযোগিদের নিয়ে পুনঃরায় ঘটনাস্থলে যায় এবং পানির নীচ থেকে রিয়াজ উদ্দিনকে উদ্ধার করে। তারা তাকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে রিয়াজ উদ্দিনকে মৃত ঘোষনা করেন চিকিৎসক।
তিনি জানান, ময়না তদন্ত শেষে মাথায় আঘাতের কারণে রিয়াজ উদ্দিন মারা যান বলে ময়না তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়। কালিগঞ্জ থানা পুলিশ হত্যা মামলাটি ৩ মাস তদন্ত করে চুড়ান্ত রিপোর্ট সত্য বিজ্ঞ আদালতে দায়ের করলে আদালত স্বপ্রনোদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই গাজীপুর জেলাকে নির্দেশ প্রদান করেন। পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ জামাল উদ্দিন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে খুনের এ ঘটনায় জড়িত ওই তিনজনকে গ্রেফতার করেন। তারা চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।