এএফসি কাপে মাঠে নামার আগেই বাংলাদেশ দলের অধিনয়ক জামাল ভূইয়া প্রতিপক্ষে হুশিয়ার করে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ সহজ প্রতিপক্ষ নয়। আজ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানের কাছে হেরে যাবার আগে সেটা প্রমান দিয়েছে জামল ভূইয়ারা। ফিফার তালিকায় অনেক উপরে থাকা তুর্কমেনিস্তানের কাছে হেরেছে ২-১ ব্যবধানে।
অ্যাটাক থেকে ডিফেন্স সব বিভাগেই নিজেদের নতুন করে চেনাল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। পুরো ম্যাচে বুকচিতিয়ে লড়াই করা বাংলাদেশ আজ ১১ (জুন) এএফসি কাপ বাছাই পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানের কাছে হেরেছে ২-১ গোলে।
মালয়েশিয়ার বুকেত জলিল স্টেডিয়ামে ম্যাচের প্রথমেই গোলে খেয়ে পিছিয়ে পরা বাংলাদেশ সমতায় ফেরে ১০ মিনিটের ব্যাবধানে। আলতিমিরাতের গোলে এগিয়ে যায় তুর্কমেনিস্তান। এরপর ইব্রাহিমের গোলে সমতায় ফেরে বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয়র্ধে আমানোভের গোলের পর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি জামাল ভূঁইয়ারা।
বাহরাইনের বিপক্ষের ম্যাচের অপরিবর্তিত একাদশ নিয়েই র্যাংকিংয়ে ৫৪ ধাপ এগিয়ে থাকা তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নামে লাল-সবুজ জার্সিধারিরা। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তুর্কমেনিস্তানের রক্ষনে চাপ ধরে রেখে খেলে বাংলাদেশ। নিকট অতীতে ঠিক কবে বাংলাদেশ এতটা সাহসি ফুটবল খেলেছে তা মনে করতে পারবেন না অনেক ফুটবল ভক্তরা। শুধু ফিনিশিংয়ের দূর্বলতাটা আবারও ভোগাল কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যদের।
ফিনিশিংটা ঠিকঠাক করতে পারলে এই ম্যাচে হার নয় বরং জয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে পারতেন কাবরেরার শিষ্যরা। নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাহরাইনের কাছে ২-০ ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। মালয়েশিয়ার কাছে তুর্কমেনিস্তান হেরেছিল ৩-১ ব্যবধানে। আসরে টিকে থাকতে এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না দুই দলের সামনে কিন্তু সুযোগ তৈরি করেও কাজে লাগাতে ব্যর্থ বাংলাদেশ। আক্রমণের পসরা সাজিয়েও একটির বেশি গোল করতে পারেনি হাভিয়ের কাবরেরার দল।
ম্যাচের শুরুতে বাংলাদেশের রক্ষনে তুর্কমেনিস্তান কিছুটা চাপ সৃষ্টি করলেও সময়ের সাথে সাথে খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছেন জামাল ভূঁইয়ারা। প্রথমার্ধ শেষ হয়েছে ১-১ সমতায়। প্রথমে তুর্কমেনিস্তানকে এগিয়ে দেন আলতিমিরাত। বাংলাদেশকে সমতায় ফেরান ইব্রাহিম।
১২তম মিনিটে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। বিশ্বনাথের লম্বা থ্রো ইনে রাকিব হাসানের ব্যাক হেড গোলরক্ষক লাফিয়ে উঠে এক হাতে উঠিয়ে দেন। তবে বিপদমুক্ত করতে পারেননি তিনি। ফিরতি বলে হেড করে গোল করেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম। পিছিয়ে পরার দশ মিনিটেই ম্যাচে ফিরে নতুন উদ্যমে খেলতে থাকেন কোচ হ্যাভিয়ে কাবরেরার শিষ্যরা। একের পর এক আক্রমনে তুর্কমেনিস্তানকে ব্যাস্ত করে রাখেন জামাল ভূঁইয়ারা।
প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধেও সমান তালে লড়াই করে দুই দল। বাংলাদেশের চেয়ে ৫৪ ধাপ এগিয়ে তুর্কমেনিস্তান, মাঠের খেলায় তাঁর ছিলনা কোনো প্রভাব। চোখে চোখে রাঙিয়ে লড়াই করা বাংলাদেশকে নিখুঁত ফিনিংশের অভাবটা বড্ড ভুগিয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সহজ সুযোগ নষ্ট হয় বাংলাদেশের। বাম প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে উপরে উঠে অপর প্রান্তে ফাকায় থাকা সাজ্জাদের দিকে ঠেলে দেন রাকিব। তার সামনে ছিল শুধুই গোলকিপার কিন্তু সময় মত নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি সাজ্জাদ। ফলে নষ্ট হয় সুযোগ।
৫৪ মিনিটে আরো একটি সুযোগ নষ্ট করেন সাজ্জাদ। ডান প্রান্ত থেকে ইব্রাহিমের মাপা ক্রস বক্সের ভেতর ঠিক ঠাক মাথা ছোঁয়াতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড। ৫৮ মিনিটে জামালের কর্নারে বল জালে জড়ানোর সুযোগ পান ইয়াসিন আরাফাত কিন্তু বল মারেন আকাশে। ৭৩ মিনিটে সহজ সুযোগ গোলে পরিণত করতে পারেননি বদলি নামা ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। সামনে ছিল শুধুই গোলকিপার কিন্তু দূরের পোস্টে না মেরে গোলকিপারের সোজা মারেন তিনি। এত এত সুযোগ নষ্টের খেসারত দিতে হলো বাংলাদেশকে।
৭৭ মিনিটে বাংলাদেশের রক্ষণের ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যায় তুর্কমেনিস্তান। বাম প্রান্ত থেকে আন্নাদুরদিয়েভ আলতিমিরাতের পাসে গোলমুখে পা লাগিয়ে বল জালে পাঠান বদলি নামা আমানোভ। তার গায়ের সঙ্গে সেঁটে থেকেও আটকাতে পারেননি ইয়াসিন আরাফাত।
সমতায় ফেরার সুবর্ণ সুযোগটা নষ্ট করেন ডিফেন্ডার টুটুল হোসেন বাদশা। ৯০ মিনিটে জামালের ফ্রিকিক দুরের পোস্টে অরক্ষিত থাকা বাদশা ঠিকঠাক পা লাগালেই পেতে পারতেন গোলের দেখা কিন্তু তাঁর শট চলে যায় পোস্টের উপর দিয়ে। ফলে আশা জাগিয়েও হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
এই হারের পরও নতুন করে স্বপ্ন দেখতেই পারে বাংলাদেশ। ম্যাচে তাদের আগ্রাসী মনোভাব জানান দিচ্ছিল নতুন দিনের। নিজেদের শেষ ম্যাচে আগামী ১৪ জুন স্বাগতিক মালেয়শিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।