ভারতে অল্ট নিউজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ জুবায়েরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে দিল্লি পুলিশ গ্রেফতার করেছে তাকে। তবে অনেকে মনে করছেন, বিজিপি নেত্রী নূপুর শর্মা মহানবী সা.কে নিয়ে যে কটূক্তি করেছিলেন, সেটা সামনে নিয়ে আসার কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সোমবার গ্রেফতারের পর তাকে এক দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, একই অভিযোগে দায়ের হওয়া এফআইআরের ভিত্তিতে কেন গ্রেফতার হচ্ছেন না বিজেপির মুখপাত্র (বর্তমানে সাসপেন্ডে থাকা) নূপুর শর্মা?
উল্লেখ্য, নূপুর শর্মা যে টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন, তা জুবায়েরই প্রথম প্রকাশ্যে আনেন। নূপুর এখনো অধরা থাকলেও, জুবেরকে ২০১৮-য় করা একটি টুইটের ভিত্তিতে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ। দিল্লি পুলিশ সরসরি নিয়ন্ত্রিত হয় অমিত শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। দিল্লি পুলিশ এফআইআরে দাবি করেছে, ‘জুবায়েরের পোস্ট অত্যন্ত প্ররোচনামূলক এবং মানুষের মধ্যে ঘৃণা উৎপাদন করার পক্ষে যথেষ্ট।’
কিন্তু কী টুইট করেছিলেন জুবায়ের? সূত্রের খবর, ২০১৮-য় জুবের টুইটে একটি ছবি শেয়ার করেছিলেন। সেই ছবিতে নামফলকে হিন্দিতে লেখা ‘হনুমান হোটেল’। যা দেখে বোঝা যাচ্ছে, আগে এই হোটেলের নাম ছিল ‘হানিমুন হোটেল’। হানিমুন মুছে হনুমান করা হয়েছে। সাংবাদিক জুবায়ের সেই টুইটে লিখেছিলেন, ২০১৪-এর আগে যা ছিল হানিমুন হোটেল, ২০১৪-এর পর তা-ই হয়েছে হনুমান হোটেল!
এই টুইটের প্রেক্ষাপটে জুবায়েরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন এক টুইটার ব্যবহারকারী। অভিযোগকারীর অভিযোগ, হনুমানজি যেহেতু ব্রহ্মচারী, তার সাথে হানিমুন যুক্ত করে হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাত করা হয়েছে।
এই ঘটনা ২০১৮-এর। ২০২২-এ এসে দিল্লি পুলিশ সেই টুইটের জেরে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগে সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছে। আদালতে তার চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নেয়ার আবেদন করে দিল্লি পুলিশ। কিন্তু বিচারক এক দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
এই আবহে চলতি মাসের শুরুর দিকে পুলিশের ডেপুটি কমিশনার কেপিএস মালহোত্রা বলেছিলেন, ‘সাংবাদিক জুবায়েরের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ১৫৩-এ (ধর্ম, বর্ণ, জন্মস্থান, ভাষা ইত্যাদির ভিত্তিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা প্রচার করা) এবং ২৯৫-এ (ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত কাজ) ধারায় মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।’ মালহোত্রা বলেন, জুবায়ের সোমবার তদন্তে যোগ দেন এবং পর্যাপ্ত প্রমাণ সংগ্রহের পর তাকে গ্রেফতার করা হয়।
যদিও পুলিশের বিরুদ্ধে পালটা অভিযোগ তুলেছেন অল্ট নিউজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্রতীক সিনহা। বিষয়টি নিয়ে তিনি দাবি করেন, ২০২০ সালের একটি মামলার তদন্তের জন্য জুবায়েরকে তলব করেছিল দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল। এই মামলায় ইতিমধ্যে জুবায়েরকে সুরক্ষাকবচ দিয়েছিল হাইকোর্ট। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় ৬টা ৪৫ মিনিট নাগাদ তাদের জানানো হয় যে অন্য একটি এফআইআরের ভিত্তিতে জুবায়েরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে এর প্রেক্ষাপটে কোনো নোটিশও দেয়া হয়নি। বারবার আর্জি জানানো সত্ত্বেও এফআইআরের কোনো কপি দেয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন অল্ট নিউজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্রতীক।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা ও হিন্দুস্তান টাইমস