ডলার –সংকট ঠেকাতে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি কোন ধরনের ঋণপত্র খোলা হচ্ছে, তা–ও তদারকি করছে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে ৫০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ঋণপত্র খোলার তথ্য ২৪ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি গতকাল পাঁচ প্রতিষ্ঠানের প্রায় আড়াই কোটি ডলারের ঋণপত্র খোলা স্থগিত করেছে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় আড়াই শ কোটি টাকা। অতীতে ঋণপত্র আটকে দেওয়ার ঘটনা শোনা যায়নি। জানা গেছে, বাজারমূল্যের চেয়ে আমদানি মূল্য বেশি হওয়া ও ঋণপত্রে বেশি মূল্য দেখানোয় এ পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে অনেক আমদানিকারকের অভিযোগ, রিজার্ভ কমতির দিকে থাকায় ইচ্ছাকৃতভাবেই এ পদক্ষেপ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তিনটি ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান বাজারমূল্যের চেয়ে আমদানি মূল্য বেশি হওয়ায় ঋণপত্রগুলো স্থগিত করা হয়েছে। অবশ্য চুক্তিমূল্য বেশি হওয়ায় ঋণপত্রে বেশি মূল্য দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যাদের ঋণপত্র আটকে দিয়েছে, তাদের মধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় খাদ্যপণ্য আমদানি, উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত বড় শিল্পগোষ্ঠী রয়েছে। এ ছাড়া জাহাজভাঙা শিল্পের একটি কোম্পানিও আছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, অনিয়মের তথ্য পাওয়ায় ঋণপত্রগুলো স্থগিত করা হয়েছে। ব্যাংক যথাযথ নথিপত্র দিতে পারলে ছেড়ে দেওয়া হবে। না হলে তা স্থগিতই থাকবে। ডলার–সংকট মোকাবিলায় এসব পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
Adipolo
ডলার-সংকট নিরসনে গত বৃহস্পতিবার একসঙ্গে চারটি সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সেগুলো হচ্ছে ব্যাংকের ডলার ধারণের সীমা (এনওপি) হ্রাস, রপ্তানিকারকের প্রত্যাবাসন কোটায় (ইআরকিউ) ধারণকৃত ডলারের ৫০ শতাংশ নগদায়ন, ইআরকিউ হিসাবে জমা রাখার সীমা কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা এবং অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিটে স্থানান্তর। এ ছাড়া ৫০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের বেসরকারি যেকোনো আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
সংকট কিছুটা কমেছে
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন উদ্যোগের পর ডলার-সংকট কিছুটা কেটেছে। গতকাল সোমবার অনেক রপ্তানিকারক তাঁদের ইআরকিউ হিসেবে জমা থাকা ডলার বিক্রি করেছে। পাশাপাশি অনেক ব্যাংকও ডলার ছেড়েছে। এর ফলে এদিন বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে।
তবে ব্যাংকগুলো গতকালও প্রবাসী আয় সংগ্রহে প্রতি ডলারে ১০০ টাকার কাছাকাছি দিয়েছে। আবার আমদানি ব্যয় মেটাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছেও প্রতি ডলার ১০০ টাকায় কাছাকাছি দামে বিক্রি করেছে।
একজন আমদানিকারক জানান, গতকাল আমদানি দায় পরিশোধে ব্যাংক তাঁর কাছে প্রতি ডলারের দাম ধরেছে ৯৯ টাকা ৫০ পয়সা। ঋণপত্র (এলসি) খোলার সময়ে বলা হয়েছিল ডলারের দাম ৯৩ টাকা। প্রতি ডলারে এত টাকা বাড়লে পণ্যের দাম বাড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
এদিকে জ্বালানি তেল ও সার আমদানির দায় মেটাতে একাধিক ব্যাংকের কাছে ১০ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতি ডলারের দাম ধরা হয়েছে ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা।
জ্বালানি তেল ও ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে সার্বিকভাবে আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ডলারের ওপর চাপ পড়েছে। আবার রপ্তানি বাড়লেও তা আমদানির মতো নয়। প্রবাসী আয়ও বাড়েনি, বরং তা কমেছে। ফলে দেশে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। এতে বেড়ে গেছে প্রধান আন্তর্জাতিক মুদ্রাটির দাম। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতি ডলারের দাম ৯৪ টাকার মধ্যে থাকলেও প্রবাসী আয় ও পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
জ্বালানি তেল ও ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে সার্বিকভাবে আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ডলারের ওপর চাপ পড়েছে। আবার রপ্তানি বাড়লেও তা আমদানির মতো নয়। প্রবাসী আয়ও বাড়েনি, বরং তা কমেছে। ফলে দেশে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। এতে বেড়ে গেছে প্রধান আন্তর্জাতিক মুদ্রাটির দাম। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতি ডলারের দাম ৯৪ টাকার মধ্যে থাকলেও প্রবাসী আয় ও পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
এদিকে ডলার-সংকট মেটাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে রিজার্ভ কমে এখন চার হাজার কোটি ডলারে নেমে এসেছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কয়েক মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলারের মজুতে চাপ বাড়ছে।
ডলার-সংকট নিরসনে এর আগে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশভ্রমণ বন্ধ করা হয়। দামি গাড়ি, প্রসাধনী, স্বর্ণালংকার, তৈরি পোশাক, গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য বৈদ্যুতিক সামগ্রী, পানীয়সহ ২৭ ধরনের পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে ব্যাংকঋণ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে আমদানি খরচ কিছুটা কমবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডলার-সংকট কিছুটা কমেছে। তবে সরকারি আমদানির জন্য একাধিক ব্যাংকের কাছে ১০ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে।