জাতীয়

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বন্ধুরাষ্ট্রের দ্রুত সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, তা না হলে মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশ সংকটে পড়বে। এরইমধ্যে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মাদক, অস্ত্র চোরাচালানসহ সীমান্তে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লু’তে আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা অ্যান্ড নারকো টেররিজম’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। দেশের একমাত্র কূটনীতিবিষয়ক ম্যাগাজিন ‘ডিপ্লোম্যাটস ওয়ার্ড’ এর আয়োজন করে।

সেমিনারে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, মায়ানমার বর্ডার দিয়ে রোহিঙ্গারা এদেশে মাদক নিয়ে আসছে। একটা অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রোহিঙ্গারা এসব মাদক উৎপাদনে জড়িত নয়। বিদেশি এজেন্সিগুলো থেকেও আমরা এমন কোনো তথ্য পাইনি। এই বিষয়টা স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করে যে, তাহলে এসব মাদক কোথা থেকে প্রক্রিয়াজাত করা হয় বা উৎপাদিত হয়, এর পেছনে কারা রয়েছে। এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, বাংলাদেশে কোনো ধরনের মাদক উৎপাদন হয় না। কিন্তু বাংলাদেশ এই ভয়াবহ মাদকের শিকার হচ্ছে।

কয়েকটি এজেন্সি থেকে প্রাপ্ত কয়েক বছরের মাদক চোরাচালানের পরিসংখ্যান তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০১৬ সালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার ইয়াবা জব্দ করে। এ দেশে রোহিঙ্গা আগমনের পরের বছরই এটি বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ২০ লাখ ৩৩৪ পিসে।

তিনি বলেন, যখন জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা যখন এ দেশে আশ্রয় নিয়েছিল, তখন ধারণা করা হয়েছিল মায়ানমার থেকে মাদক চোরাচালান কমবে। কিন্তু এখন তার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। মায়ানমারে চলমান সংঘাতের মধ্যেও দেশটির মাদক উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং পরিবহণ চক্র বহাল তবিয়তে রয়েছে। শুধু বাংলাদেশই নয়, মাদক চোরাচালান ইস্যুতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকেও সমান ভূমিকা রাখতে হবে।

বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদক চোরাচালান শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি পুরো বিশ্বেরও সমস্যা। মাদক চোরাচালানের সঙ্গে অবৈধ অস্ত্রেরও চোরাচালান হয়। যদি দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হয়, তবে এই নির্যাতনের শিকার জনগোষ্ঠী উগ্রবাদী গোষ্ঠীর টার্গেটে পরিণত হবে এবং তারা উগ্রবাদের সঙ্গে জড়িয়ে যাবে।

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, মাদক চোরাচালান, অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে সীমান্তে। রোহিঙ্গা এলাকায় বেড়েছে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের সংখ্যাও। সিনথেটিক ড্রাগস আসছে সীমান্ত দিয়ে। যেখানে বাহক হিসেবে কাজ করছে রোহিঙ্গারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে অস্ত্র চোরাচালান। চোরাচালানের কেন্দ্রে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। মানবপাচারের ঘটনা ঘটছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো থেকে।

সেমিনারে প্যানেল আলোচনা করেন নিরাপত্তাবিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখওয়াত হোসেন, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের সাবেক প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে. জেনারেল (অব.) মাহফুজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।

আমন্ত্রিত রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন, সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান এবং ব্রুনাইয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যারিস বিন ওথমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ।