রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের অর্গানোগাম অনুয়াযী ৪৭ হাজার জনবলের মধ্যে এখনও প্রায় ২৫ হাজার জনবল ঘাটতি রয়েছে। ইতোপূর্বে নিয়োগবিধির কারণে আমরা জনবল নিয়োগ দিতে পারিনি। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মার্শাল ল’ এবং এরশাদের মার্শাল ল’র সময়ে রেলে নিয়োগসহ যতো অর্ডিনেন্স হয়েছে, আইন হয়েছে, তার সবগুলোই মহামান্য সুপ্রীমকোর্টে বাতিল হয়েছে। বর্তমানে অর্গানোগাম অনুযায়ী রেলে এ জনবল নিয়োগের অনুমোদন এখন আমরা পেয়েছি। নিয়োগ বিধিও অনুমোদিত হয়েছে। তার ভিত্তিতেই ইতোমধ্যে আমরা লোকবল নিয়োগ শুরু করেছি।
মন্ত্রী বলেছেন, রেলওয়ের কমলাপুর হতে টঙ্গী স্টেশন পর্যন্ত ফোর লেনের এবং টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডাবল রেললাইন নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্নের দিকে এগিয়ে চলেছে। আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডাবল রেললাইনটি চালু হবে। তবে কাজের যে অগ্রগতি দেখছি এর আগেও এটি চালু হতে পারে। তিনি এসময় ডাবল লাইনের কাজের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
মঙ্গলবার দুপুরে রেলমন্ত্রী টঙ্গী-জয়দেবপুর রুটে চলমান ডাবল রেললাইনের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশনে সংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। এসময় তার সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) মোঃ কামরুল ইসলাম, ডাবল লেন প্রকল্পের পরিচালক নাজনীন আরা কেয়া, গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাসরীন পারভীন ও এনডিসি মোঃ মাসুদুর রহমানসহ প্রমূখ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারনে নৌপথ ও সড়ক পথে পরিবহনের ভাড়া নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে ভাড়া বাড়িয়ে সমন্বয় করা হলেও ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয় নি। তবে এনিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
মন্ত্রী রেলওয়ের জনবল নিয়োগ প্রসঙ্গে বলেন, ইতোমধ্যে ৫৬০জন স্টেশন মাস্টার নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছে। ইতোপূর্বে (ফোরথ্ এবং ফিফথ্ এমেন্টমেন্ট) জিয়াউর রহমানের মার্শাল ল’ এবং এরশাদের মার্শাল ল’র সময়ে যতো অর্ডিনেন্স হয়েছে, আইন হয়েছে, তার সবগুলোই মহামান্য সুপ্রীমকোর্টে বাতিল হয়েছে। সেখানে ১৯৮৫ সালে এরশাদ সাহেবের সময়ে রেলওয়ের যে নিয়োগ বিধি ছিল, এটা বাতিল হয়েছে। যে কারণে দীর্ঘদিন আমরা রেলে কোন নিয়োগ দিতে পারছিলাম না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশে রেলের যে অর্গানোগাম অনুযায়ী তাতে প্রায় ৪৭ হাজার/ সাড়ে ৪৭ হাজারের উপরে জনবল রয়েছে। অর্গানোগাম অনুযায়ী এ জনবল নিয়েগের অনুমোদন এখন আমরা পেয়েছি। নিয়োগ বিধিও অনুমোদিত হয়েছে। তার ভিত্তিতেই ইতোমধ্যে আমরা লোকবল নিয়োগ শুরু করেছি। রেলে ৪৭হাজার জনবলের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ২৫হাজার লোকবল ঘাটতি আছে।
মন্ত্রী রেলগেইট নিয়ে বলেন, রেলগেট দেই আমাদের রেলের নিরাপত্তার জন্য। আর এর উপর দিয়ে (এলজিডি’র) সড়ক রয়েছে তার নিরাপত্তর সড়ক বিভাগের। আমার বিভাগের নিরাপত্তার অভাব থাকলে সেটা আমি দেখবো। সে ক্ষেত্রে অভিযোগকারী হবো আমি। আমার রেলপথকে ক্রস করতে গিয়ে কেউ যদি দূর্ঘটনার শিকার হয় তার দায়িত্ব রেলকে দেয়া যাবে না।
আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপেজ দেয়া নিয়ে মন্ত্রী বলেন, সব ট্রেনতো সব স্টেশনে দাঁড়াবেনা। ভবিষ্যতে জয়দেবপুর জংশনকে ঢাকার অংশ হিসেবেই দেখা হবে। ডাবল লাইনগুলোর নির্মাণ কাজ হয়ে গেলে ডেডিকেটেড ট্রেনগুলো যাতে জয়দেবপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত আসা-যাওয়া করতে পারে সেভাবে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। তাই আন্তঃনগর ট্রেনের সবগুলো জয়দেবপুর জংশনসহ সবজায়গায় স্টপেজ দিতে পারছি না।
পরে ডাবল লেন প্রকল্পের পরিচালক নাজনীন আরা কেয়া সাংবাদিকদের জানান, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার কমলাপুর থেকে টঙ্গী স্টেশন পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার পথ ডাবল লেনেরস্থলে ফোর লেনে উন্নীত করণ এবং টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর স্টেশন পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথ সিঙ্গেল লেনেরস্থলে ডাবল লেনে উন্নীত করার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রায় ১৩শ’ কোটি টাকা ব্যায়ে ওই প্রকল্পের কাজ অপকন কল্পতরু নামের ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডাবল লেনটি চালু হতে যাচ্ছে। বর্তমানে টঙ্গী থেকে বনানী পর্যন্ত ফোরলেনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। বনানীর পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এর কাজ শেষ হলে আমরা পরবর্তী অংশের কাজ শুরু করতে পারবো। এ প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত রয়েছে। তবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের কারনে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।