রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রোহিঙ্গা সংকটের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের একার সংকট নয়। এটি একটি বৈশ্বিক সংকট। দুঃখের বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা সংকট যে একটি বৈশ্বিক সংকট আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সে বিষয়ে যথাযথভাবে উদ্ধুব্ধ কিংবা কনভিন্স করতে পারেনি। বিশ্বের অন্যান্য মানবিক সংকটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে সাড়া দেয় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তারা সেভাবে এগিয়ে আসেনি। এটা নিঃসন্দেহে সরকারের চরম কূটনৈতিক ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই না।
মির্জা ফখরুল বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার মূল চ্যালেঞ্জ তথা নিরাপদ রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়াটি একেবারেই স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকার তাদের প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই সংকটকে এখন আর গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না বিশ্ব। ২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ইস্যুটি আরো জটিল আকার ধারণ করেছে। এই পটভূমিকায় বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি আন্তর্জাতিক সংহতি এখন আগের চেয়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ভারত, চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের দেশগুলোসহ আন্তর্জাতিক মহল আরো কার্যকরী ও ফলোপ্রসূ চাপ না দিলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পাঠানো সম্ভব নয়। এজন্য বাংলাদেশ সরকারকে আরো জোরালো রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। মিয়ারমারের সামরিক জান্তার ওপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারে ব্যর্থতার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সংকটের শুরু থেকেই জনবিচ্ছিন্ন অনির্বাচিত সরকার চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি রাখাইনে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর কোনো কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে সরকার পারেনি। একজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকেও তারা (সরকার) রাখাইনে পাঠাতে পারেনি। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিনের এই সমস্যাকে কার্যকরভাবে আন্তর্জাতিকীকরণ করতে না পারা নিসন্দেহে সরকারের চরম ব্যর্থতা বলে আমরা মনে করি।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনকে কেবল কাগুজে চুক্তিতে বন্দি না রেখে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় চুক্তির কার্যকর প্রয়োগের পথে এগুতে হবে। এই সংকট সমাধানে জাতিসংঘ, আঞ্চলিক সংস্থা, বিশ্বপরাশক্তিগুলোর স্ব স্ব ভূমিকা সুনিশ্চিত করতে হবে। কার্যকর কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে জাতিসংঘসহ আঞ্চলিক মহলকে বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতার কথা উপলব্ধি করাতে হবে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া হতে হবে স্বেচ্ছায়, মিয়ানমারের নাগরিকত্ব নিয়ে, সম্মানজনক ও টেকসই। কোনো ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের পাতানো খেলার অপকৌশল হিসেবে নয়।
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের সরকার প্রধান থেকে শুরু করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিদেশ সফরও করেননি বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার কথা তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, আন্তর্জাতিকভাবে দুর্বল এবং স্বৈরসরকার হিসেবে পরিচিত একটি ম্যান্ডেট বিহীন সরকারের পক্ষে রোহিঙ্গা সমস্যার মতো জটিল ও আন্তর্জাতিক সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। কেবলমাত্র একটি জনবান্ধব গণতান্ত্রিক সরকারের দ্বারাই এটা সম্ভব। যা বাংলাদেশে এই মুহূর্তে অনুপস্থিত।
‘একটি অগণতান্ত্রিক ও গণবিচ্ছিন্ন সরকারের সার্বিক অব্যবস্থাপনা ও দুবৃর্ত্তায়নের ধারাবাহিক পরিণতিই হচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক ব্যর্থতা ও স্থবিরতার প্রধান কারণ। তাই এই মুহূর্তে সর্বাগ্রে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার দিকেই আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই সম্ভব হবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া’।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশ শুধু অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, সামাজিকভাবে বড় ধরনের ভয়ের কারণ আছে। যেটা আপনারা বুঝতেই পারছেন। এই সরকারের চরম ব্যর্থতা যার মূল হচ্ছে, তাদের নেগোসিয়েটিং ক্যাপাসিটি নেই। তাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে একটা অনির্বাচিত সরকার হওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক নেগোসিয়েশনে তারা চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। এটাতে পুরো জাতির একটা কনসেন্সাসের ব্যাপার আছে যেটা তাদের(সরকার) নেই।