আসন্ন গাজীপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী মো. মোতাহার হোসেন মোল্লা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমানের কাছে মনোননয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর আগের দিন বুধবার গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক এসএম মোকছেদ আলম দলীয় মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েই একই পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
মো. মোতাহার হোসেন মোল্লা’র গ্রামের বাড়ি কাপাসিয়া উপজেলা শহরে। তিনি ১৯৭৫সালে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেছেন। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে সিন্ডিকেট মেম্বার। ১৯৯৬ সালে জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি, ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ২০১২সালে একই সংগঠনের সভাপতি ছিলেন। ২০০৯-২০১৩ সাল পর্যন্ত কাপাসিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য।
গাজীপুর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ছিলেন এসএম মোকছেদ আলম । তিনি এলাকায় আলম হিসেবেই বেশি পরিচিত। তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে থেকে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রিধারী আওয়ামীলীগের একজন নিবেদিত প্রাণ নেতা।
মোকছেদ আলম ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পূর্ণ মেয়াদে গাজীপুর জেলা পরিষদে প্যানেল চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন। তিনি ছাত্রজীবনে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৮৪-৯০ সালে সাবেক জয়দেবপুর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, ২০০২ সালে সাবেক বাসন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন।
মোকছেদ আলম স্বর্ণা পোল্ট্রি ফিড’র সাবেক স্বত্ত্বাধিকারী, শালবন এগ্রো প্রাইভেট লিমিটেড’র সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পাওয়ার ফিস এন্ড পোল্ট্রি ফিড লিমিটেড’র চেয়ারম্যান, বস এগ্রো ফার্ম ও কমপ্লেক্সের মালিক, বুলবুল টাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিলাশী মৎস খামারের স্বত্ত্বাধিকারী, গাজীপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক এবং গাজীপুর পোল্ট্রি বহুমূখী সামগ্রী বিক্রেতা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাবেক প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনে সহকারি রিটানিং অফিসার কাজী মো. ইস্তাফিজুল হক আকন্দ জানান,
বূধবার মোকছেদ আলম এবং বৃহস্পতিবার মো. মোতাহার হোসেন মোল্লা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন গাজীপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে পাঁচটি উপজেলা, ৩টি পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে একজন চেয়ারম্যান ছাড়াও পাঁচজন সাধারণ সদস্য এবং দুইজন সংরক্ষিত (মহিলা) সদস্য প্রার্থী প্রতিযোগিতা করতে পারবেন।
চেয়ারম্যান পদে যারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তাদের মধ্যে জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য এসএম নজরুল ইসলাম, শ্রীপুর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনা সদস্য সামশুদ্দিন খন্দকার ও গণফ্রন্টের গাজীপুর জেলা কমিটির সভাপতি আতিকুর রহমানের নাম রয়েছে।
নির্বাচনে সহকারি রিটানিং অফিসার কাজী মো. ইস্তাফিজুল হক আকন্দ জানান, গাজীপুর সদর উপজেলার ওয়ার্ড’র অধিক্ষেত্রগুলো- গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদ, এর অধীনে ভাওয়াল মির্জাপুর, ভাওয়াল গড়, পিরুজালী ও বাড়িয়া ইউনিয়ন এবং গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের সমগ্র এলাকা।
কালিয়াকৈর উপজেলার ওয়ার্ডের অধিক্ষেত্রগুলো-কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদ, এর অধীনে মৌচাক, মধ্যপাড়া, বোয়ালী, ফুলবাড়িয়া, চাপাইর, শ্রীফলতলী, সূত্রাপুর, আটাবহ, ঢালজোড়া ইউনিয়ন পরিষদ এবং কালিয়াকৈর পৌরসভা।
শ্রীপুর উপজেলার ওয়ার্ডের অধিক্ষেত্রগুলো হলো- শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ, এর অধীনে মাওনা, গাজীপুর, তেলিহাটি, কাওরাইদ, বরমী, গোসিংগা, রাজাবাড়ি, প্রহলাদপুর ইউনিয়ন এবং শ্রীপুর পৌরসভা।
কাপাসিয়া উপজেলার ওয়ার্ডের অধিক্ষেত্রগুলো হলো-কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদ, এর অধীনে সিংহশ্রী, রায়েদ, টোক, বারিষাব, কড়িহাতা, ঘাঘটিয়া, সনমানিয়া, তরগাঁও, কাপাসিয়া, দূর্গাপুর ও চাঁদপুর ইউনিয়ন সমূহ।
কালীগঞ্জ উপজেলার ওয়ার্ডের অধিক্ষেত্রগুলো হলো- কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ, এর অধীণে নাগরী, তুমুলিয়া, বক্তারপুর, জাঙ্গালিয়া, বাহাদুর সাদী, জামালপুর, মোক্তারপুর ইউনিয়ন সমূহ এবং কালীগঞ্জ পৌরসভা।
গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী মো. ইস্তাফিজুল হক আকন্দ জানান, গাজীপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার ৬৩৬জন। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড সদস্য, পৌরসভার মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা হলেন জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার। ভোটারদের মধ্যে গাজীপুর সদরের ১৩২জন, কালিয়াকৈর উপজেলায় ১৩১জন, শ্রীপুরে ১২০জন, কাপাসিয়ায় ১৪৬জন এবং কালীগঞ্জে ১০৭জন ভোটার রয়েছেন। তাদের ভোটে গাজীপুরে একজন চেয়ারম্যান, ৫জন সদস্য ও ২জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচিত হবেন।
গত ৩১অগাস্ট নির্বাচন কমিশন গাজীপুরসহ ৬১ জেলা পরিষদ ভোটের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী ১৭ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হবে। আগ্রহী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ১৮ সেপ্টেম্বর বাছাইয়ের পর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৫ সেপ্টেম্বর।