লালমনিরহাট পাটগ্রাম উপজেলাধীন দহগ্রাম ইউনিয়নে গরুর স্লিপ বানিজ্য বন্ধে গত ছয় মাসের ডাটাবেইজসহ প্রকৃত কৃষকের গরুর তালিকা তৈরি করে সাত দিনের মধ্যে প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন লালমনিরহাট অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট তহিদুল আলম। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট তহিদুল আলম।
জানা গেছে, দহগ্রামে কৃষকের গরু নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের স্লিপ বানিজ্য নিয়ে অভিযোগ উঠায় এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় জেলা প্রশাসনের নজরে আসে। তার প্রেক্ষিতে গত রোববার দুপরে সরেজমিনে তদন্ত করে দহগ্রাম ইউপি সচিব আনিসুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট তহিদুল আলম। পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস কক্ষে এ বিষয়ে শুনানীতে উপজেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শ্যামল কুমার, পানবাড়ি বিজিবি ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার, স্থানীয় কাস্টম কর্মকর্তা, দহগ্রাম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আব্দুল কাদের, দহগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, ইউপি সচিব, সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যগণ এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্যসহ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দহগ্রামে গরু কেন্দ্রিক যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে ওই সিন্ডিকেট টাকা নিয়ে গরুর স্লিপ প্রদান এবং গরুর নিলাম সম্পর্কিত বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও বিজিবির কাছে জানতে চান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট। এ ছাড়াও আবেদনের প্রেক্ষিতে কোন কোন কৃষককে বাজারে গরু বিক্রয়ের স্লিপ প্রদান করা হয়েছে তাও জানতে চান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট। এসময় সন্তোষজনক কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বিজিবি ও ইউপি চেয়ারম্যান।
শুধু তাই নয়, এসময় নিলামের কাগজ সম্পর্কিত কোনো তথ্য দেখাতে না পারাসহ স্টেটমেন্টে বিজিবির সই না করা, জরিপ সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান না করা, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কর্তৃক স্লিপ বানিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপনের ভিত্তিতে পরিশেষে এক সপ্তাহের মধ্যে ডাটাইবেজ প্রদানের নির্দেশ দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
উল্লেখ্য, দহগ্রাম থেকে প্রতি শনিবার এবং বুধবার ৩০টি করে মোট ৬০টি গরু তিনবিঘা করিডোর গেইট দিয়ে দেশের মুল ভূখন্ডে নিয়ে আসার অনুমতি দেয় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ। নির্ধারিত এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গরু কেন্দ্রিক দহগ্রামে গড়ে উঠেছে বিশাল এক সিন্ডিকেট। যে সিন্ডিকেট চোরাই পথে ভারত থেকে গরু এনে জনপ্রতিনিধিদের নিকট থেকে স্লিপ নিয়ে বাজারে বিক্রয় করে। ফলে দহগ্রামের কৃষকেরা সাংসারিক প্রয়োজনে বাজারে গরু বিক্রয় করা থেকে বঞ্চিত হয়। তারা এ বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে।
অভিযোগ আছে কাষ্টমস কর্তৃক নিলামকৃত গরু বাদ দিয়ে দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে স্লিপ বা গরু বিক্রয়ের রশিদ প্রদান করা হয় তার প্রতিটি স্লিপ ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে জেলা প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব সংবাদের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট তহিদুল আলম গত রোববার সরেজমিন তদন্ত করেন।
এ বিষয়ে মুঠো ফোনে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট তহিদুল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন ইউনিয়ন পরিষদের সচিবকে আমি একটা সময় বেঁধে দিয়েছি এই সময়ের মধ্যে কোন কোন কৃষক গরু বিক্রয় করেছে তার একটি তালিকা দিতে বলেছি। তদন্ত রিপোর্ট নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডিসি স্যারের কাছে দাখিল করা হবে বলে তিনি জানান।