চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক কংগ্রেস শুরু হলো রোববার (১৬ অক্টোবর)। এ উপলক্ষ্যে রাজধানী বেইজিংয়ে কঠোর নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এটি কমিউনিস্ট পার্টির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সভা। এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
এই সম্মেলনের মধ্যদিয়ে চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তার আগে জিরো কোভিড নীতি, তাইওয়ান ইস্যুসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে রুদ্ধদ্বার আলোচনা হবে।
সম্মেলন শুরুর দিনই ভাষণে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বললেন, জিরো-কোভিড একটি ‘ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করার জন্য সর্বাত্মক জনগণের যুদ্ধ। তিনি বলেন, এই নীতি জীবন রক্ষা করেছে। তবে এটি চীনের মানুষ ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবও ফেলেছে’। শি জিনপিং আরও যোগ করেন, চীন ‘সম্ভবত সর্বাধিক মানুষের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা রক্ষা করেছে’।
সবকিছু ঠিক থাকলে ৬৯ বছর বয়সী শি জিনপিংকে দলের সাধারণ সম্পাদক আবারও নির্বাচন করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) নেতা হিসেবে তৃতীয় মেয়াদ মাও সেতুংয়ের পর তার সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা হওয়ার পথ প্রশস্ত করবে।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির এই সম্মেলনকে ঘিরে বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এরই মধ্যে সম্মেলনে অংশ নিতে বিভিন্ন প্রদেশ থেকে ২ হাজার ৩০০ প্রতিনিধি জড়ো হয়েছেন। কংগ্রেস প্রতিনিধিরা প্রথমে বাছাই করবেন কেন্দ্রীয় কমিটির ২০৪ সদস্য। পরে নির্বাচিত করবেন ২৫ সদস্যের পলিটব্যুরো। এটাই চীনের মন্ত্রিসভা।
ইতিহাস সৃষ্টি করবেন শি জিনপিং
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের ওপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রক এই পার্টির সম্মেলন একটি বড় বিষয়। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর চীনা কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এই কংগ্রেসে দল ও দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হবে। এই কংগ্রেসেই বোঝা যাবে—আগামী পাঁচ বছরে চীন কীভাবে অসংখ্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবে। এই চ্যলেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে কোভিড-১৯ এবং মন্থর অর্থনীতি থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কঠিন সম্পর্ক পর্যন্ত। এগুলো চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং ভৌগোলিক প্রভাবের জন্য বাড়তি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে।
বিরল প্রতিবাদ
বৃহস্পতিবার বেইজিংয়ের হাইডান জেলার সিটং ব্রিজের ওপর এই অভিনব এবং বিরল প্রতিবাদ হয়েছিল। প্রতিবাদকারী ব্রিজের ওপর থেকে দুটি ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়। এর একটিতে চীনের অনুসৃত কঠোর ‘জিরো কোভিড’ নীতি বাতিলের দাবি জানানো হয়। আরেকটিতে শি জিনপিংকে ক্ষমতা থেকে উত্খাতের ডাক দেওয়া হয়। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গেই বিক্ষোভকারীকে আটক করে। অনেকে এই বিক্ষোভকারীর প্রশংসা করে তাকে ‘বীর’ বলে বর্ণনা করেন।
অনেকে তাকে তুলনা করেন, তিয়ানানমেন স্কয়ারের সেই বিক্ষোভকারীর সঙ্গে, যিনি ১৯৮৯ সালের বিক্ষোভের সময় একটি ট্যাংকের পথরোধ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এই ব্যক্তি গবেষণা বিষয়ক একটি ওয়েবসাইট ‘রিসার্চগেটে’ সমপ্রতি একটি ইশতেহার আপলোড করে। এটি পরে সরিয়ে নেওয়া হয়, কিন্তু সেটির কপি অনেকে আবার অন্যান্য জায়গায় প্রকাশ করেছে।
চীনে নতুন সংকট, জনমনে বাড়ছে ক্ষোভচীনে নতুন সংকট, জনমনে বাড়ছে ক্ষোভ
২৩ পৃষ্ঠার এই ইশতেহারে আজ রবিবার একটি ধর্মঘট এবং আইন-অমান্য আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। এতে কোভিড পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে হামলা চালাতে বলা হয়। এতে বলা হয়, ‘স্বৈরশাসক শি জিনপিং যেন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখতে না পারে এবং চীন যেন গণতন্ত্রের পথে যেতে পারে সেজন্যে এই আন্দোলন।’ চীনে এ ধরনের প্রতিবাদ এক বিরল ঘটনা। এই প্রতিবাদের পর বেইজিংয়ে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে