অপরাধ

কুষ্টিয়ায় বারান্দার দরজা ভেঙে ফ্ল্যাটে ঢুকে শিক্ষিকাকে হত্যা

কুষ্টিয়ায় নিজ বাড়ি থেকে রোকসানা খানম রুনা (৫২) নামের এক স্কুলশিক্ষিকার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের হাউজিং ডি ব্লকের সাততলা বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাট থেকে তার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে তাকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

রোকসানা খানম রুনা কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের ইংরেজি বিষয়ের সিনিয়র শিক্ষিকা ছিলেন। তার স্বামী খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান এলজিইডি’র যশোর চৌগাছার হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

নিহতের স্বজনরা বলেন, রোকসানার স্বামী যশোরে চাকরি করেন। তিনি সেখানেই থাকেন। মাঝেমধ্যে কুষ্টিয়ায় আসেন। তাদের কোনো সন্তান নেই। রোকসানা একা বাসায় থাকতেন। মাঝেমধ্যে তার শাশুড়ি এসে থাকতেন। তিনিও কয়েকদিন ধরে ঢাকায়। বাসায় একা ছিলেন রোকসানা। সকালে তার সাড়া না পেয়ে পুলিশকে খবর দেন স্বজনরা। পরে পুলিশ তার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে।

পুলিশ জানায়, ছয়তলা বিশিষ্ট বাড়িটি ওই শিক্ষিকার নিজের। তিনি দ্বিতীয় তলায় একাই বসবাস করতেন। ওই বাসার চতুর্থ তলায় থাকতেন ওই শিক্ষিকার ভাই এ কে এম নুরে আসলামের পরিবার।

রোকসানার ভাতিজি নওরোজ কবির নিশাত জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফুপু রোকসাানা খানমকে তারা ডাকতে গিয়ে দেখেন দরজা ভেতর থেকে লক করা। অনেক ডাকাডাকি করার পরও দরজা না খোলায় তারা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানালে পুলিশ তাদের দরজা ভেঙে ফেলার জন্য বলে। পরে কয়েকজন মিলে দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে তারা দেখতে পান দোতালার দক্ষিণ পাশের শয়ন কক্ষের বিছানার ওপর রক্তাক্ত অবস্থায় তার মরদেহ পড়ে আছে। ওই ঘরের আসবাবপত্র, কাপড়-চোপড়, ড্রয়ার সবকিছু ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় মেঝেতে পড়ে রয়েছে। পুলিশকে খবর দেওয়া হলে বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ, র‌্যাব, পিবিআই, ডিবি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়।

কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার হোসেন খান জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি একটি হত্যাকাণ্ড। তবে কারা, কী উদ্দেশ্যে তাকে হত্যা করেছে, বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। দুর্বৃত্তরা দোতালার বারান্দার দরজা ভেঙে ওই বাড়িতে প্রবেশ করে এবং হত্যাকাণ্ড শেষে আবার ওই দরজা দিয়েই পালিয়ে যায়। সার্বিক বিষয় পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. এফতে খাইরুল ইসলাম বলেন, রোকসানা খানম তার স্কুলের একজন ইংরেজির সিনিয়র শিক্ষিকা ছিলেন। একজন ভালো শিক্ষিকা হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন ভালো মানুষ ছিলেন। তার কোনো শত্রু থাকতে পারে, এটা আমার বিশ্বাস হয় না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষিকার এক স্বজন বলেন,‘এডুকেয়ার নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার শেয়ার ছিল। এ নিয়ে গত ৬ নভেম্বর তাদের সঙ্গে ঝামেলাও হয়। হাউজিং এলাকায় এডুকেয়ারের একাধিক আবাসিক ভবন রয়েছে। সেখানে তারা নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণ করছে। পাশাপাশি কয়েক মাস আগে মোবাইল ব্যাংকিং এ প্রতারণার শিকার হন তিনি। তার একাউন্ট থেকে ৭৫ হাজার টাকা তুলে নেন প্রতারকরা।