‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি’সহ নানা দাবিতে বিএনপি দেশের আট বিভাগ ও দুই সংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ করছে।ইতোমধ্যে ৬টি বিভাগে সম্মেলন শেষ করেছে দলটি। এখন বাকি সিলেট ও সবশেষ ঢাকায়। এরমধ্যে আগামীকাল (শনিবার) সিলেটে ও ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সম্মেলন করবে বিএনপি।
ইতোমধ্যে সিলেট বিভাগীয় বিএনপির গণসমাবেশকে সামনে রেখে দলীয় নেতাকর্মীরা সিলেট আসতে শুরু করেছেন। আগামীকাল (শনিবার) সম্মেলনের তারিখ ধার্য হলেও বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা থেকে দুদিন আগেই অনেকে এসে অবস্থান নিয়েছেন।
বিশেষ করে আজ (শুক্রবার) সকাল থেকে বিভাগের তিন জেলা সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে পরিবহণ ধর্মঘট থাকায় গত রাতেই এসব জেলার নেতাকর্মীদের অধিকাংশ নেতাকর্মী সিলেট পৌঁছান।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেট আসেন বিএনপির কেন্দ্রীয় একটি টিম। এতে রয়েছেন গণসমাবেশের সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন। সিলেট এসেই তারা গণসমাবেশস্থল পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া আজ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারাও আসার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপির সমাবেশের দিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেট জেলায় এবং শুক্রবার সকাল থেকে আগামীকাল (শনিবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি।
বৃহস্পতিবার থেকে সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়েছে শতাধিক নেতাকর্মী। সেখানে তাদের রাত্রি যাপনসহ খাওয়া-ধাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সমাবেশস্থলে রয়েছে বিভাগের বাকি জেলা নেতাদের অবস্থানের জন্য পৃথক ক্যাম্প। সন্ধ্যায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সমাবেশস্থলে ছিটানো হয় মশক নিধন ওষুধ।
শুক্রবার দুপুরে নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে স্থাপিত ক্যাম্পগুলোতে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা অবস্থান করছেন। ভাসমান ব্যবসায়ীরা সেখানে বেচাবিক্রি চালাচ্ছেন। মাঠের একপাশে বড় বড় হাঁড়িতে সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের জন্য রান্নার করা হচ্ছে।
রান্নার দায়িত্বে থাকা বাবুর্চি শাহ আলম বলেন, আজ ১০ হাজার লোকের জন্য মোরগ পোলাও রান্না করছে। রান্না শেষ হলে মাঠে থাকা যেকোনো নেতাকর্মী এই খাবার খেতে পারবেন।
এ ছাড়া বগুড়া থেকে আসা সুমন নামে এক ব্যক্তি সন্দেশ এনে বিক্রি করছেন সমাবেশস্থলে।প্রতি পিস সন্দেশ ১০ টাকায় কিনে খাচ্ছেন সমাবেশে আসা বিএনপি নেতাকর্মীরা।
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি কর্মীদের জন্য মাঠে ফ্রি পানি বিতরণের ব্যবস্থা করেছে। রাতে আসা নেতাকর্মীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে নগরীর বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে। কেউ কেউ অবস্থান নিচ্ছেন মসজিদের বারান্দায়। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে স্থানীয় বিএনপি নেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এদিকে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ও গণসমাবেশের প্রচার ও মিডিয়া উপকমিটির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী অভিযোগ করেন, বেশ কয়েকটি জায়গায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কর্মীদের গ্রেফতার করছে যা গণতান্ত্রিক দলের কর্মসূচির জন্য অযাচিত বাধা।
তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবহার করে গণসমাবেশ বানচালের চেষ্টা করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। তবে যত বাধাই আসুক, সমাবেশ সফল হবে বলে তিনি আশাবাদী।
তবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপি অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে দাবি করেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি জানান, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। কোনো রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ বানচালের সঙ্গে দলের কারো সম্পৃক্ততা নেই। সমাবেশের নামে কেউ জানমালের ক্ষতি সাধন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে সহ্য করা হবে না বলে জানান।
অপরদিকে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের দুই দিনব্যাপী ইজতেমা আজ (শুক্রবার) সকাল ১০টায় শেষ হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয় আখেরি মুনাজাত। ইজতেমায় গতকাল (বৃহস্পতিবার) দিনব্যাপী শতাধিক আলেম-ওলামা বক্তব্য দেন।