জাতীয়

নির্বাচন আদৌ হবে কি না সন্দেহ দিলীপ বড়ুয়ার

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট শরিক বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্লোগানের মধ্য দিয়ে আদৌ নির্বাচন না-ও হতে পারে’।

নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ থাকার কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘এখানে বর্তমানে যে পরিস্থিতি, সেটাকে প্রধানমন্ত্রী এককভাবে ট্যাকল দিতে চাচ্ছেন। প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে তিনি সমস্ত সংকটকে ট্যাকল করতে চাচ্ছেন। সেখানে দেশের জনগণকে, রাজনীতিকদের সম্পৃক্ত করার বিষয়টি অনুপস্থিত।’ তাহলে আপনারা কি আশা করছেন—এ প্রশ্নের জবাবে দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের পক্ষে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখার পক্ষে। আমরা চাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।’

২০০৮ সালের নির্বাচনে আপনি ১৪ দল থেকে মনোনয়ন পাননি কেন—বিবিসি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার আসনে (চট্টগ্রাম-১, মিরসরাই) আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আমাকে ডেকে বললেন, ‘আপনাকে মন্ত্রী বানাব, নির্বাচন কইরেন না। পরে প্রধানমন্ত্রী ওয়াদা রেখেছেন।’
মন্ত্রী না হয়ে তখন এমপি হলে কি আপনার দল আরও বিকশিত হতো—এমন প্রশ্নের জবাবে দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘এটা আপেক্ষিক বিষয়। এটা নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর, আমি কী কৌশল অবলম্বন করছি, সেটির ওপর।’ একই প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কথা রাখেনি। ১৪ দল যখন গঠিত হয়, তখন কথা ছিল একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন ও ক্ষমতা। আওয়ামী লীগ প্রথমে আমাদের সরকারে নিল, দ্বিতীয়বারও জোটের কাউকে কাউকে নিলেন। কিন্তু পরের বার (চলতি মেয়াদে) উনি (প্রধানমন্ত্রী) সম্পূর্ণ একা হয়ে গেলেন। আমাদের পথে ছেড়ে দিলেন। সরকারের অনেক অর্গান আছে, কিন্তু আমাদেরকে কোথাও সম্পৃক্ত করেননি’।

২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় কী ধারণা করেছিলেন যে, এই সরকার এতদিন ক্ষমতায় থাকবে—এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এটা ধারণা করিনি। অন্তত দুই মেয়াদে থাকবে, এটা ধারণা করেছিলাম। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থাটাই জনমুখী নয়। কিন্তু এই রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপর যদি আপনি নির্ভর করে চলেন, তাহলে আপনি রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে অন্ধকার চোরাগলির দিকে ঠেলে দেবেন। এখন আমাদের রাজনীতি তো তা-ই হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী তো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করছেন না। উনি নির্ভর করছেন প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা ও ওনার এক্সপার্টদের ওপর। এমনকি রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগেরও সঠিক কার্যক্রম নেই।’

১৪ দলের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হয়তো আমাদের নিয়ে ভাবছে—আর কোথায় যাবে, আমাদের সঙ্গে তো থাকবেই। কিন্তু আমাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে—১৪ দলের যৌবনকাল শেষ, ১৪ দল এখন বার্ধক্যে উপনীত, একপর্যায়ে এর মৃত্যু ঘটবে, এটা অবধারিত’। তাহলে কী আপনি বা আপনার দল আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে আসবে—বিবিসির এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করছি। একটা সময় অবশ্যই আসবে, সেটা নির্বাচনের আগে বা পরে। আমরা নতুন করে সবকিছু মূল্যায়ন করব। প্রয়োজন হলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকব, না হলে থাকব না’। আওয়ামী লীগকে ছাড়তে পারবেন—এমন প্রশ্নে তার জবাব, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই পারব। পারব না কেন’।

আপনার দলের মতো ১৪ দলে আরও যারা আছেন জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি, তারাও কি হতাশ—এই প্রশ্নের জবাবে দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘পরিস্থিতি এমনটা হবে, এটা অবধারিত। বঙ্গবন্ধুর আমলেও এটা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু থেকে প্রধানমন্ত্রী একটু উন্নত। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যারা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন; ন্যাপ, সিপিবি এদেরকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন সাইনবোর্ড বদলে আস। অথচ যেখানে তখন তাদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গৌরবজ্জ্বল। প্রধানমন্ত্রী সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন। একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠনের কথা বলে ১৪ দল হলো। এটা না হলে আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যেতাম না। না গেলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারত না। ১৪ দল না হলে আওয়ামী লীগ এককভাবে ক্ষমতায় আসতে পারত না, এটা সম্ভব ছিল না’।

‘আওয়ামী লীগ আপনাদের এমপি-মন্ত্রী বানিয়েছে, সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে, সেই কারণে তো কৃতজ্ঞতা থাকা উচিত’—এ রকম প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘কৃতজ্ঞতা আমাদের প্রতিও (আওয়ামী লীগের) থাকা উচিত। ১৪ দল না হলে ওনারা ক্ষমতায় যেতে পারতেন না। এটা জেন্টেলম্যান অ্যাগ্রিমেন্ট, মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং। আপনি আমাকে কিছু ছাড় দেবেন, আমিও আপনাকে ছাড় দেব। উনি তো তিন বার আছেন। তখন তো আমাদের বলা হয়নি যে—এক বা দুই বার আমাদের নেওয়া হবে’।

আবারও মন্ত্রী-এমপি হবেন কি না—বিবিসি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি না। সেই বাস্তবতা আস্তে আস্তে ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছে।’ সামনে নির্বাচন, নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগ আপনাদের সঙ্গে বসবে—এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এক ধরনের কথাবার্তা হয়তো হবে। সেটাও হবে দায়সারা গোছের। তাছাড়া নির্বাচন হবে কি-না, তাও একটা বিষয়’।