কাতার বিশ্বকাপে বড় হোচট খেলো জার্মানি। আসরে নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচে মাথা নিচু করেই মাঠ ছাড়তে হলো হ্যান্সি ফ্লিকের দলকে। জাপানের কাছে হেরে গেছে ২-১ গোলে। অথচ ইতিহাস, ঐতিহ্য, পরিসংখ্যান, শক্তিমত্তা সব দিক থেকেই ঢের এগিয়ে ছিল জার্মানি। কিন্তু আজ আর তা সহায় হলো না জার্মানের। জাপানের রূপকথায় খলনায়ক হয়েই থাকলো তারা।
এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সেরা ম্যাচটাই হয়তো দেখে ফেলেছে কাতার বিশ্বকাপ। মুহুর্মুহু আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে প্রতি মুহূর্তে উত্তেজনা ছড়িয়েছে উভয় দল। তবে জাপানের খেলা দেখে মনে হতেই পারে, বিশ্বের সেরা দলটাই হয়তো এখন মাঠে আছে। ম্যাচের শেষাংশে এসে একক আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে জাপান, চারবারের বিশ্বকাপজয়ী দলটা যেন হয়ে উঠেছিল অসহায়। বাধ্য হয়ে গোলপোস্ট ছেড়ে ম্যানুয়াল নয়্যার উঠে এসেছেন উপরে।
জার্মান রক্ষণকে নিয়মিত বিরতিতেই কাঁপিয়ে দিয়েছে জাপানের আক্রমণ ভাগ। যদিও ২-১ গোলের জয়ের হাসি হেসেছে এশিয়ার দেশটি, তবে ভাগ্য সহায় পেতে পারতো আরো অন্তত হালিখানেক গোলের দেখা। বিশেষ করে ম্যানুয়েল নয়্যার বরাবরের মতো অবিশ্বাস্য না হয়ে উঠলে বড় হারের লজ্জা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হতো হ্যান্সি ফ্লিকের দলকে।
বুধবার সন্ধ্যা ৭াটায় কাতারের খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল জার্মানি ও জাপান। ইনজুরির কারণে আজকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় লেরয় সানেকে ছাড়াই খেলতে নামে জার্মানি।
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলা শুরু করেছিল জার্মানরা। কিন্তু শুরুতেই হোচট খেতে গিয়েও বেঁচে যায় দলটি। কারণ ম্যাচের ৯ মিনিটের মাথায়ই প্রথম গোলটি পেয়ে যেতে পারত জাপান। কিন্তু অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায় মায়েদা’র গোলটি।
এরপর বেশ নড়েচড়েই ওঠে হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা। বেড়ে যায় আক্রমণের ধারও। ২০ মিনিট সময়ে গিয়ে জার্মান ডিফেন্ডার ডেভিড রাউমের বলটি লুফে নিয়ে গুন্দোগানকে পাস দিয়েছিলেন কিমিখ। কিন্তু সেই বল বারের ওপর দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন গুন্দোগান।
তবে অবশেষে জার্মানির ভাগ্য খোলে ম্যাচের ৩০ মিনিটের মাথায়। জার্মান লেফট ব্যাক ডেভিড রাউমকে ডিবক্সে ট্যাকল করেন জাপানিজ গোলকিপার গোন্দা। ফলে পেনাল্টি পেয়ে যায় জার্মানি। স্পটকিক থেকে লক্ষ্যভেদ করে দলকে এগিয়ে নেন ইলকায়ে গুন্দোগান।
প্রথমার্ধেই ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ এসেছিল জার্মানির জন্য। অতিরিক্ত সময়ে একটি গোল করেছিলেন কাই হাভার্জ, কিন্তু ভিএআরে চেক করে গোলটি বাতিল করে দেন রেফারি।
দ্বিতীয়ার্ধেও জমে ওঠে দুই দলের লড়াই। ৫১ মিনিট সময়ে কর্নার থেকে বল পেয়ে যান মুসিয়ালা। কিন্তু কিছুটা নার্ভাস মুসিয়ালার শটে বল চলে যায় বারের ওপর দিয়ে। ফলে গোলের আরো একটি সুযোগ হাতছাড়া হয় তাদের। কয়েক মিনিট পরে জাপান মিডফিল্ডার মিতোমা রুডিগারকে কাটিয়ে গোল করার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন।
৬৮ মিনিটের মাথায় আবারো সুযোগ তৈরি হয় জপানের সামনে। রাইট ফ্ল্যাংক ধরে সাকাইয়ের লম্বা পাসটি রিসিভ করেন আসানো। কিন্তু শট নেয়ার আগেই আবারো বল ক্লিয়ার করেন রুডিগার।
এবারে আবারো বল পায়ে পেয়ে আক্রমণে জার্মানি। জার্মান উইংগার সার্জ গেন্যাব্রি বল দেন জোনাস হফম্যানকে, তবে বল সরিয়ে দেন জাপানিজ গোলরক্ষক গোন্দা। ভাসতে থাকা বল লুফে নিয়ে প্রায় সাথেসাথেই ফের বল গোলপোস্টে ঢোকানোর চেষ্টা করেছিলেন বটে গেন্যাব্রি, কিন্তু তাকে থামিয়ে দিয়ে চমৎকারভাবে দলকে গোল খাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেন তিনি।
সাথেসাথেই পাল্টা আক্রমণে যায় জাপান। ৭৫ মিনিটের মাথায় বদলি খেলোয়াড় ফ্রেইবুর্গ ফরোয়ার্ড রিতসু ডোনের গোলে সমতায় ফেরে ব্লু সামুরাইরা।
এবারে মরিয়া হয়ে খেলতে শুরু করেছে জার্মানি। কিন্তু ততক্ষণে এলোমেলো হয়ে গেছে জার্মান ডিফেন্স। ৮০ মিনিটের মাথায় কর্নার পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি কিমিখ।
ঠিক এর কিছুক্ষণ পরেই ইতাকুরার ফ্রি কিক থেকে বল নিয়ে নিকো স্লোকাটারব্যাককে কাটিয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেন আরেক বদলি খেলোয়াড় আরেক বুন্দেসলিগা ক্লাব ভিএফএল বখুমের ফরোয়ার্ড তাকুমা আসানো। এ পর্যন্ত জাপানের জার্সিতে আসানোর করা আটটি গোলের চারটিই এসছে সাবস্টিটিউট খেলোয়াড় হিসেবে।
অতিরিক্ত সময়ে গিয়ে আরো একটি গোল হজম করতে পারত জার্মানি, কিন্তু নিকো স্ক্লোটারব্যাক বল ক্লিয়ার করে আরো বড় লজ্জার হাত থেকে বাঁচিয়ে দেন জার্মানিকে। এরপর বারবার ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করলেও এলোপাতাড়ি শটে সে আশা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ফলে জাপানের কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরে যায় জার্মানি।