জাতীয়

মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ ছবিসহ ৫০ বছর পর ফিরলেন ফরাসি ফটোগ্রাফার

১৯৭১ সালে ২৫ বছরের যুবক ছিলেন ফরাসি ফটোগ্রাফার অ্যান ডি হেনিং। ওই সময় এক যুবক তাকে অনুরোধ করেছিল পাকিস্তানের দখলদার সেনাবাহিনীর নৃশংসতার কথা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে। তিনি সেই সময় চলে এসেছিলেন বাংলাদেশে। ক্যামেরায় ধারণ করেছিলেন উত্তাল সেইসব দিনের দৃশ্য। এর সঙ্গে ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন মুহূর্ত।

অ্যান ডি হেনিং এখন ৭৬ বছর বয়স পার করছেন। ৫১ বছর আগে তোলা তার ছবি নিয়ে ঢাকায় ‘উইটনেসিং হিস্ট্রি ইন দ্য মেকিং: ফটোগ্রাফস বাই অ্যান ডি হেনিং’ শিরোনামে শুরু হয় প্রদর্শনী।

সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন এবং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) যৌথভাবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।

দীর্ঘ ৫০ বছর পর বাংলাদেশ সফরে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অ্যান ডি হেনিং বলেন, ১৯৭১ সালে যখন আমি বাংলাদেশের গল্প ধারণ করছিলাম, তখন একজন যুবক বর্ণনা করেছিলেন কীভাবে নিরপরাধ মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। তিনি আমাকে এসব দৃশ্য বিশ্ববাসীকে জানাতে অনুরোধ করেছিলেন।

যুদ্ধকালীন অন্ধকার দিনের পর তিনি যখন বাংলাদেশে এসেছেন তখন দেশ উদযাপন করছে বিজয়ের আনন্দ। এতে ভীষণ উচ্ছ্বসিত এই ফটোগ্রাফার। তিনি বলেন, যেদিন জাতি তাদের বিজয় উদযাপন করছে এবং সারা শহরে লাল-সবুজ পতাকা উড়ছে, সেই দিনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ্যে ঢাকা সফরে এসেছি।

এছাড়াও তিনি ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় যে স্থানগুলো পরিদর্শন করেছিলেন তার কয়েকটি সফর করবেন বলে জানান।

যুদ্ধকালীন গল্প কভার করার ক্ষেত্রে নারী ফটোগ্রাফার ও সাংবাদিকদের ভূমিকার প্রতি প্রতিফলন করে তিনি বলেন, নারী সাংবাদিকরা তাদের পুরুষ সহকর্মীদের মতো সমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারীর সংখ্যা কম হওয়া ছাড়া আর কোনো পার্থক্য ছিল না।

অ্যান ডি হেনিং কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিকদের মধ্যে ছিলেন, যারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চোখ এড়িয়ে যুদ্ধকালীন বাংলাদেশে ভ্রমণ করেছিলেন। কারণ পাকিস্তান এর আগেই বিদেশি সংবাদকর্মী ও ফটোগ্রাফারদের তাড়িয়ে দিয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন অ্যান ডি হেনিং। যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে তার প্রতিটি ছবিতে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে স্থান করে নিয়েছে নারী-পুরুষ-শিশু, নিজ গ্রামের বাড়ি-ঘর ছেলে শরণার্থী হিসেবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া।

মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে আরও একবার বাংলাদেশে আসেন অ্যান ডি হেনিং। মূলত পাকিস্তানের শোষকদের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলাদেশের মুক্তি ও স্বাধীনতা এনে দেওয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখতে এই সফর ছিল তার।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের সঙ্গে হত্যার পর সেই পাকিস্তানপন্থী গোষ্ঠী ধীরে ধীরে বাংলাদেশ থেকে তার সব ছবি মুছে ফেলার চেষ্টা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রঙিন ছবিগুলোর মধ্যে কিছু ছবি ছিল অ্যান ডি হেনিংয়ের কাছে।

প্রদর্শনী নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র এবং আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সিআরআইয়ের ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক বলেন, ‘উপমহাদেশের এমন একজন নেতা ছিলেন যিনি তার দেশকে প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক এবং সবার সমান অধিকারের ভিত্তিতে স্বাধীন করতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশের সবাই তার এই দাবির পক্ষে একাত্মতা প্রকাশ করে।

স্বাধীনতার পর আয়োজিত আওয়ামী লীগের প্রথম জাতীয় সম্মেলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখতে উপস্থিত ছিলেন অ্যান ডি হেনিং। তিনি বলেন, কলকাতা থেকে শুধুমাত্র এই ইভেন্টের ছবি তোলার জন্য আমি সে সময় ঢাকায় আসি। যদিও সে সময় অ্যান ডি হেনিং সাদা-কালো ছবি তুলতেন। কিন্তু সম্মেলনে সাদা-আকাশী রঙের ছটা দেখে রঙিন ছবি তোলেন এই ফটোগ্রাফার।