স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ঢাকার বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে রাজউকের নতুন ড্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে। এখানে আমার ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই। কারোর ক্ষতি করাও এই মাস্টার প্ল্যানের উদ্দেশ্য নয়। এখন রিহ্যাব নতুন ড্যাপ সংশোধনের দাবি তুলেছে। দেশ, সমাজ ও শহরের যদি কোনো ক্ষতি না হয়, তাহলে রিহ্যাবের দাবিগুলো বিবেচনা করা হবে।
বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) আবাসন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, উন্নত জীবনযাপনের জন্য পরিকল্পিত নগরায়ণ প্রয়োজন। নিরাপদ ও মানসম্পন্ন আবাসনব্যবস্থা আধুনিক জীবনযাত্রার অন্যতম উপাদান। আবাসন এক ধরনের হিউম্যান রাইটস (মানবাধিকার)। একইসঙ্গে শপিংমল, স্কুল, হাসপাতাল, মসজিদ ও রাস্তা সবই দরকার। আবাসিক এলাকার কাছাকাছি সবকিছু থাকলে যানবাহনের ব্যবহার কমবে। আমাদের পরিবেশ দূষণের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে।
তিনি বলেন, ঢাকাকে সুন্দরভাবে বসবাসযোগ্য করার জন্য ইতোমধ্যে ড্যাপের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ড্যাপের ফ্লোর এরিয়া রেশিও-এফএআর হ্রাসের বিষয়ে অনেকের মধ্য থেকে উদ্বেগ প্রত্যক্ষ করেছি। সবার যৌক্তিক দাবি বিবেচনা করব।
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ড্যাবের সভাপতি হিসাবে কোনো পার্শিয়ালিটি (পক্ষপাতিত্ব) করিনি। আমি কারো পক্ষ-বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছি না। দেশের কল্যাণে কোথাও কোনো কিছু করা হলে আমি সেটা অবশ্যই করব। ৫০ বছর পর ঢাকার জনসংখ্যা হিসাব করেই আমরা সেটা করব। ঢাকাসহ সারা দেশের নাগরিকদের আবাসনের স্বপ্ন পূরণে রিহ্যাবের অবদান অনেক বড় বলেও অভিমত দেন তিনি।
রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আল আমীন (কাজল) বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিটি নির্মাণসামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং নতুন ড্যাপে এফএআর হ্রাসের কারণে আমরা আবাসন সেক্টর নিয়ে বড় ধরনের সংকটে রয়েছি। এফএআর হ্রাসের কারণে মূল ঢাকায় বেশিরভাগ ভবন হবে ৪ থেকে ৫ তলা। ফলে আগামী দিনে আবাসন সংকট আরও প্রকট হবে।
রিহ্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইন্তেখাবুল হামিদ বলেন, পরিকল্পিত ও আধুনিক বাসস্থান তৈরিতে গৃহঋণের অবদান অনস্বীকার্য। বর্তমান প্রেক্ষাপটে একজন নাগরিকের পক্ষে হাউজিং লোন (ঋণ) ছাড়া ফ্ল্যাট বা প্লট ক্রয় করা প্রায় অসম্ভব। ক্রেতারা যাতে খুব সহজে এই ঋণ পেতে পারে সেই ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।
রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রথম) কামাল মাহমুদ বলেন, এই মুহূর্তে যা আমাদের জন্য বড় সংকট তৈরি করেছে, তার একটি নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি। অন্যটি ড্যাপের এফএআর হ্রাস।
রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফিন্যান্স) ও ফেয়ার স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, এ বছর মেলায় আমরা যে দামে ফ্ল্যাট বিক্রি করতে পারছি, আগামী দিনে এই দামে বিক্রি করা সম্ভব হবে না। কেননা নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি এবং নতুন ড্যাপে ভবনের এফএআর কমিয়ে দেওয়া।
স্বপ্নীল আবাসন সবুজ দেশ, লাল-সবুজের বাংলাদেশ- এই স্লোগানকে সামনে রেখে এবার রিহ্যাব মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকায় রিহ্যাব হাউজিং মেলা শুরু হয়। আয়োজকরা জানান, এবারের মেলায় ১৮০টি স্টল রয়েছে। ৫ দিনব্যাপী এই মেলা চলবে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।