আন্তর্জাতিক

ভারতে পুতিনের সমালোচক রুশ এমপির রহস্যময় মৃত্যু

ভারতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচক হিসেবে পরিচিত একজন রুশ এমপির মৃত্যু হয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, উড়িষ্যার ছোট শহর রায়গড়াতে এক রহস্যজনক পরিস্থিতিতে তার মৃত্যু হয়।

৬৫ বছর বয়সী ওই রুশ আইনপ্রণেতার নাম পাভেল আন্তোভ। স্থানীয় পুলিশ বলছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। ভারত সরকারের তরফে এই ঘটনা নিয়ে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে দিল্লিতে নিযুক্ত রুশ দূতাবাসের তরফে মঙ্গলবার এ নিয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাদের জানামতে, রায়গড়াতে আন্তোভসহ আরও একজন রুশ নাগরিকের মৃত্যুর সঙ্গে কোনও অপরাধের সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।

দূতাবাসের এমন বিবৃতি সত্ত্বেও আন্তোভের মৃত্যুকে ঘিরে ইতোমধ্যেই বহু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কেননা, এর আগেও রাশিয়ার ভেতরে ও বাইরে সরকারের বহু সমালোচকের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

উড়িষ্যার রায়গড়া ভারতের পর্যটন অঙ্গনে খুব পরিচিত কোনও জায়গা নয়। কিন্তু সেখানকার হোটেল সাই ইন্টারন্যাশনালে গত ২১ ডিসেম্বর চেক ইন করে চার জন রুশ পর্যটকের একটি দল। সঙ্গে ছিলেন তাদের ভারতীয় গাইড জিতেন্দ্র সিং। চার বিদেশির ওই দলে রুশ আইনসভার সদস্য এবং ধনকুবের ব্যবসায়ী পাভেল আন্তোভও ছিলেন।

কিছুদিন আগেই ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের তীব্র সমালোচনা করে একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন পাভেল আন্তোভ। পরে অবশ্য সেটি প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন তিনি।

বিবিসি জানিয়েছে, উড়িষ্যার রায়গড়ার একটি হোটেলে চেক ইন করার পরদিনই ওই দলের একজন সদস্য ভ্লাদিমির বিদেনভ-কে হোটেলের দোতলায় নিজের ঘরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার চারপাশে অনেকগুলো ওয়াইনের খালি বোতল ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। এর ঠিক দুই দিনের মাথায় ২৪ ডিসেম্বর হোটেলের নিচে বিপুল পরিমাণ রক্তের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখা যায় পাভেল আন্তোভের নিথর দেহ।

উড়িষ্যা পুলিশের সাউথ ওয়েস্ট রেঞ্জের ডিআইজি রাজেশ পন্ডিত জানান, এই চার জনের দলটির মধ্যে দুই জনের পরপর মৃত্যু হলেও তারা এর মধ্যে এখনও সন্দেহজনক কিছু খুঁজে পাননি। তার ভাষায়, ‘প্রাথমিক তদন্তে আমরা ধারণা করছি, তিন তলায় নিজের ঘর থেকে ঝাঁপ দিয়েই ৬১ বছর বয়সী পাভেল আন্তোভ আত্মহত্যা করেছেন। আমরা তদন্তে অবশ্য সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছি। দূতাবাসের মাধ্যমে মৃতদের পরিবারের কাছে খবর পাঠিয়েছি।’

মিখাইল ও নাতালি নামে ওই রুশ পর্যটক দলের বাকি দুই জনকেও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত রায়গড় ছাড়তে নিষেধ করা হয়েছে।

এদিকে দুই দিনের মধ্যে পরপর দুই জন বিদেশি পর্যটকের মৃত্যুর পর ওই হোটেলের ম্যানেজারসহ একাধিক কর্মী বার্তা সংস্থাকে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন, অতিরিক্ত মদ্যপান ও মানসিক অবসাদজনিত কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ব্যাপারে তারা মোটামুটি নিশ্চিত।

সাই ইন্টারন্যাশনাল হোটেলের একজন কর্মী বলেন, ‘নিহত ওই দুই জন আসার পর থেকে প্রচুর মদ খাচ্ছিলেন। এর মধ্যে একজন হঠাৎ করে মারা যাওয়ায় তার বন্ধু ভীষণ বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি নিজের হুঁশেই ছিলেন না।’

তিনি বলেন, ‘খুব কাছ নিজের বন্ধুর অন্তিম সংস্কার দেখার সময়, বন্ধুর মরদেহ জ্বলতে দেখার সময় থেকেই তিনি খুব অদ্ভুত আচরণ করছিলেন – বন্ধুর ওই পরিণতি দেখার পর থেকেই তিনি মানসিকভাবে খুব ডিস্টার্বড ছিলেন, সেজন্যই বোধহয় আত্মহত্যা করেছেন।’

ওই হোটেলেরই আর একজন কর্মী বলেন, তারা ধারণা করছেন মৃতদের মধ্যে প্রথমজন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দ্বিতীয়জন প্রিয় বাল্যবন্ধুর মৃত্যুর শোক সামলাতে না-পেরে নিজেকেই শেষ করে দিয়েছেন।

ভারতে নিযুক্ত রুশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা উড়িষ্যায় তাদের দুই জন নাগরিকের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই ট্র্যাজিক পরিণতির ব্যাপারে অবহিত এবং তারা মৃতদের পরিবার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে এর আগে যেহেতু বহুবার ‘হিট জব’ চালানোর, অর্থাৎ সমালোচকদের গোপনে শেষ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তাই রায়গড়ার জোড়া-মৃত্যু নিয়েও সন্দেহ থাকছেই। পাভেল আন্তোভের মতো একজন ধনী ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ বন্ধুদের নিয়ে ছুটি কাটানোর জন্য কেন রায়গড়ার মতো অখ্যাত জায়গাকে বেছে নিয়েছিলেন, তারও উত্তর মেলেনি।