আজ ১০ জানুয়ারি প্রকাশিত হচ্ছে ব্রিটেনের প্রিন্স হ্যারির লেখা আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’। তার আগে একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৎমা তথা ব্রিটেনের বর্তমান রানি ক্যামিলাকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন তিনি।
বইয়ের কিছু কিছু অংশ পড়ে শোনান হ্যারি। তিনি লিখেছেন, কীভাবে সৎমা ক্যামিলার স্বার্থসিদ্ধির জন্য তার ভালমন্দ উৎসর্গ করতে হয়েছিল। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক টম ব্র্যাডবি হ্যারিকে সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন করেন, আপনি কি ক্যামিলার প্রতি গোড়া থেকেই খুব নিষ্ঠুর নন? জবাবে হ্যারি বলেন, “নিষ্ঠুর? আমি এমন কোনও কিছু বলিনি, যা থেকে মনে হতে পারে পরিবারের কারও প্রতি আমি নিষ্ঠুর, বিশেষ করে সৎমা তো নয়ই। এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে অতীতে, কিছু সম্প্রতি ঘটেছে, যা বেদনাদায়ক।”
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর দিনও তিনি রাজপরিবারের ব্যবহারে আহত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন হ্যারি। তার স্ত্রী মেগান বালমোরাল প্রাসাদে ‘অনাহুত’ ছিলেন। সে কথাও জানিয়েছেন। খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। দাদির মৃত্যুর বেশ পরে প্রাসাদে যান হ্যারি। ভাই উইলিয়ামের বিমানে তার জায়গা হয়নি। তিনি নিজের মতো গিয়েছিলেন, বেরিয়েও আসেন সকলের আগে। মেগান সেখানে যাননি। এ নিয়ে কথা উঠেছিল তখনই।
রাজপরিবার প্রসঙ্গে হ্যারি বলেন, “আমি বাবাকে ভালবাসি, ভাইকে ভালবাসি, আমার পরিবারকে ভালবাসি।”
তিনি জানিয়েছেন, পরিবারের কাউকে আঘাত করার মতো কোনও অভিপ্রায় তার নেই। তবে এ-ও সত্য, ‘‘নিজেদের ভাবমূর্তি ঠিক রাখতে গিয়ে কিছু মানুষ দৈত্যের সঙ্গেও বসবাস করতে রাজি হয়েছে।”
হ্যারি যোগ করেছেন, “সেটা তাদের পছন্দ ছিল। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে যখন অন্যদের ক্ষতি হচ্ছে, আমার ক্ষতি হচ্ছে, আমি সেখানে লাইন টেনে দিয়েছি।”
হ্যারি জানান, রাজপরিবারের সকলে লাইমলাইটে থাকার জন্য লড়ে চলেছে। বাবা, সৎমা কিংবা অফিসের থেকে নানাভাবে কষ্ট পেয়েছে উইলিয়াম-কেটও।
বইয়ের নাম ‘স্পেয়ার’ শব্দটি টেনে এনে হ্যারি জানিয়েছেন, তারা এখন বাড়তি। ফলে তার আর মেগানের এসব নিয়ে আর কোনও সমস্যা নেই।
বইয়ের একটি অংশে হ্যারি লিখেছেন, তিনি ও উইলিয়াম রাজা তৃতীয় চার্লসকে বলেছিলেন, “আমরা ক্যামিলাকে মেনে নিয়েছি। কিন্তু দয়া করে তাকে বিয়ে করো না। একসঙ্গে থাকো।”
হ্যারি জানিয়েছেন, তার বাবা কোনও উত্তর দেননি। কিন্তু ক্যামিলা সোজাসুজি উত্তর দিয়েছিলেন।
ওই কথাবার্তার পরই বিয়ের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দিয়েছিলেন ক্যামিলা। ক্রমে মুকুটের লক্ষ্যে এগোনো। হ্যারি বলেন, “নিশ্চয়ই এতে বাবার সম্মতি ছিল।”
হ্যারি জানিয়েছেন, “উইলির সঙ্গে ক্যামিলার ব্যক্তিগতভাবে যা যা কথা হয়েছিল, সব খবরের কাগজে বেরিয়েছিল। উইলিয়াম সংবাদমাধ্যমকে জানাননি। অতএব সেসব কথা ওই দিক থেকেই বেরিয়েছিল। ডিউক অব এডিনবরার মৃত্যুর পর দুই ভাইয়ের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়ে যায়। উইলিয়াম সে সময়ে ‘মায়ের নামে’ শপথ নিয়েছিলেন, তিনি শুধু ভাইয়ের ভাল চান।”
হ্যারি আরও বলেছেন, অপরা উইনফ্রে’র শোয়ে তারা রাজপরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ‘জাতিবিদ্বেষের’ অভিযোগ তোলেননি। সেটা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বলেছিল। তাদের সন্তান আর্চির গায়ের রং নিয়ে রাজপরিবারের পক্ষ থেকে যে কথা বলা হয়েছিল, তা ‘অসচেতনভাবে পক্ষপাতিত্ব’, জাতিবিদ্বেষ নয়।
হ্যারি বলেন, “বাঁধাধরা একটা মানসিকতা বাধা হয়ে উঠেছিল। মেগান আমেরিকান অভিনেত্রী, বিবাহবিচ্ছিন্ন, মিশ্র জাতির…।”
তবে হ্যারি বেশ জোর দিয়েই জানিয়েছেন, যা-ই হয়ে থাকুক, মেগানকে বিয়ে করা নিয়ে কখনও বাধা দেননি উইলিয়াম ও কেট।
এছাড়া নিজের বিয়েতে হ্যারির দাড়ি রাখা নিয়েও ঝামেলা হয়েছিল। রাজপরিবারে নিয়মানুযায়ী বিয়ের সময়ে বরের দাড়ি রাখা চলবে না। উইলিয়াম তাকে এ বিষয়ে চাপ দিয়েছিলেন। কিন্তু হ্যারি তাকে বোঝান, দাড়িতে তিনি সাচ্ছন্দ বোধ করেন।
তবে এখন তিনি এসবের থেকে অনেক দূরে ভাল আছেন বলে জানিয়েছেন প্রিন্স হ্যারি। তার কথায়, ‘‘মিথ্যা বলব না, গত কয়েকটা বছর খুব কঠিন ছিল। কিন্তু সত্যিটা হল, আমি এখনকার মতো ভাল আগে কখনও ছিলাম না।” সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস