বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ৫৪ শতাংশ গ্রাহককে নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করতে না পারলে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব না।
শনিবার (২১ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে টেলিযোগাযোগ সেবার মানোন্নয়নে করণীয়’- শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (এমটব) সেক্রেটারি জেনারেল এস এম ফরহাদ বলেন, বর্তমানে মোবাইল অপারেটরদের সম্মিলিত বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে টেলিকম অপারেটররা ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু এখনো দেশের ৫৪ শতাংশ মানুষ নেটওয়ার্কের বাইরে রয়েছে। যদিও ১৮ কোটির ওপর সক্রিয় সিম রয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার চাইতেও বেশি। গ্রাহকের সংখ্যা বাড়লেও স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে না।
এছাড়া এ সময় খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে টেলিযোগাযোগ সভায় ইকোসিস্টেম বাস্তবায়নসহ সবার জন্য টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা না গেলে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ টিআইএম নুরুল কবির বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য ২০৪১ সালে হলেও সময় কিন্তু খুব বেশি নেই। সরকার এবং নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত সব পক্ষের সঙ্গে বসে সমস্যা সমাধান করতে হবে। কেবলমাত্র রেগুলেশন আর লাইসেন্স প্রদান করলেই হবে না। চাই সমন্বিত উদ্যোগ।
রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড করপোরেট অফিসার ব্যারিস্টার শাহেদ আলম বলেন, আমরা সরকার ও কমিশনের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। একইসাথে প্রতিনিয়তই বিনিয়োগ করছি। কিন্তু মাঝখানে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা থাকার কারণে ই-গ্রাহকরা মানসম্পন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
আমাদের কেবল রেগুলেশনের মধ্যে রাখবেন আর প্রতিবন্ধকতা নিরসণ না করে সেবা চাইবেন সেটা কিভাবে সম্ভব? উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের টেলিকম নেটওয়ার্কের মান উন্নয়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
এছাড়া আমরা গ্রাহকদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে চাই এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চাই বলেই আজকে নাগরিকদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আমাদের শুধু রেগুলেশন দিয়ে হাত-পা বেঁধে রেখে কাজকর্ম করতে দেবেন না, অন্যদিকে গ্রাহকরা আমাদের দোষারোপ করবে এটা কি সঠিক হবে?
বাংলালিংক লিমিটেডের চিফ রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড করপোরেট অফিসার তাইমুর আলম বলেন, আমরা মানসম্পন্ন সেবা দেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। উন্নত বিশ্বের সেবার সাথে আমাদের তুলনা দেয়া হয়। অথচ উন্নত দেশের রেগুলেশন অনুযায়ী আমাদের রেগুলেশন নিয়ে কাজ করতে দেয়া হয় না।
এছাড়া ভালো মানের সেবার জন্য ইকোসিস্টেম বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি বলে জানান তিনি।
ফাইবার অ্যাট হোম’র চিফ রেগুলেটরি অ্যান্ড গভমেন্ট অ্যাফেয়ার্স আব্বাস ফারুক অভিযোগ করে বলেন, অনেক দেশেই ফাইবার এন্টি টেন নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে সরকার প্রণোদনা দিয়ে থাকে। কিন্তু আমরা এই প্রণোদনা পাই না। ২০০৯ সালে ফাইবার গাইডলাইন চালু হলেও এখন পর্যন্ত এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আজকে এই অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয় এবং নিয়ন্ত্রণ কমিশনের উপস্থিত থাকা অত্যন্ত জরুরি ছিল। এই আলোচনায় যে সমস্যা এবং সমাধানের বিষয়গুলো উঠে এসেছে এটি সমাধানের জন্য তাদেরকেই কাজ করতে হবে। অথচ তারা অন্ধকারে রয়েছে।
এছাড়া তিনি বিটিআরসির গণশুনানি নিয়েও প্রশ্ন উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, শুধু কথা বললে হবে না, আমরা কাজ দেখতে চাই। দ্রুত সেবার মান উন্নয়ন করুন।
সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে আমরা অক্সিজেন হিসেবে সহায়তা করতে চাই। অপারেটরদের ধন্যবাদ, গ্রাহকদের এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা গ্রাহকদের মাঝে উপস্থিত হয়েছেন। অপারেটর ছাড়াও সেবা প্রদানকারীদের আরো ১২০টি প্রতিষ্ঠান অন্ধকারে রয়েছে। তাদেরকে যদি জবাবদিহিতার মধ্যে আনা না যায় এবং তাদেরকে কোয়ালিটি সার্ভিস নিশ্চিত করতে বাধ্য না করা যায় তাহলে আরো কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও যোগাযোগ সেবার মান উন্নয়ন করা সম্ভব হবে না।
তিনি আরো বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, প্রতিবন্ধকতাগুলো শনাক্ত করে সকলের সাথে বসে একযোগে ঘরে ঘরে মানসম্পন্ন সেবা পৌঁছে দেয়া নিশ্চিত করুন। এতে স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চয়ই পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিকর সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনের কো-অর্ডিনেটর প্রকৌশলী আবু সালেহ।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট রাশেদা হাসান এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও শ্রেণি-পেশার মানুষ।