রাজনীতি

নয়াপল্টনে সমাবেশ থেকে যা বললেন মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বৈশ্বিক কারণে নয়, হাজার-হাজার কোটি টাকা লুট ও পাচারের জন্যই প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বাড়ছে। দেশকে পৈত্রিক সম্পদ ভেবে লুট করছে আওয়ামী লীগ। তারা জনগণকে প্রজা মনে করে তাদের মানবাধিকার, কথা বলার অধিকার, ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্রসহ সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এই অবৈধ সরকারের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই।’

বুধবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ‘২৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে’ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

এ সমাবেশ থেকে ‘আওয়ামী সন্ত্রাস, সরকারের দমন-নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে’ আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী বিভাগীয় সদরে ‘বিভাগীয় সমাবেশ’ করার ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব।

সমাবেশের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে বিএনপি। বেলা ১১টা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন দলটির নেতাকর্মীরা। দুপুরের পর নেতাকর্মীদের অবস্থান ফকিরাপুল মোড় থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। যখনই ক্ষমতায় আসে, গণতন্ত্র হত্যা করে। প্রতিবার, প্রতিক্ষণে এবং প্রতিদিন তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে চলেছে এবং আমাদের স্বপ্নগুলোকে ভেঙে ফেলেছে। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করেছিল। আবার এবারো পরিকল্পিতভাবে দেশের জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিয়ে ছদ্মবেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে। তারা আবারো তামাশার নির্বাচন করতে চায়। সে নির্বাচন দেশে হবে না।’

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কোন নির্বাচন? রাষ্ট্রপতির কোনো ক্ষমতাই নেই। রাষ্ট্রপতির আসনটাকে খুব সম্মান করি। কারণ যেই থাক, যে দলই হোক রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান। কিন্তু তিনি কি আওয়ামী লীগের অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর কথার বাইরে একটা কাজ করতে পারেন? তিনি কি নির্বাচন কমিশন পরিবর্তন করতে পারেন? তিনি কি একটা আইন পরিবর্তন করতে পারেন? পারেন না। সেই কারণে বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতে ২৭ দফা রূপরেখায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলেছে।’

যখনই বিএনপি কর্মসূচি ঘোষণা করে তখনই আওয়ামী লীগ একটা পালটা কর্মসূচি দেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিজেদের ওপরে এত আস্থার অভাব! এত ভয়। বিএনপি কর্মসূচি পালন করলে না জানি কি হয়ে যাবে। ওই ভয়ে কর্মসূচি দিয়ে বসে থাকে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বাকশাল থেকে জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিল। আর খালেদা জিয়া স্বৈরশাসন থেকে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আওয়ামী লীগ সবসময় গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। আর বিএনপি সবসময়ে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছে। এখনো এই গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছে। জনগণের ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে এই সরকারকে বিদায় করতে পারলেই দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘দেশের মানুষ কারো দাসত্ব মানে নাই, একদলীয় বাকশালও মানে নাই। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনে নেমেছি, আন্দোলনে থাকব। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, সদ্য কারামুক্ত যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও গাজীপুর জেলার সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কেন্দ্রীয় নেতা শেখ রবিউল আলম রবি, নাজিম উদ্দিন আলম, ঢাকা মহানগরের নবী উল্লাহ নবী, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, যুবদলের মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।