জাতীয়

কে হবেন রাষ্ট্রপতি, জানা যাবে রোববার

দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবেন- জানা যাবে রোববার। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী রোববার রাষ্ট্রপতি পদ প্রার্থীর মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার শেষ দিন। কাজেই ফরম নেওয়া বা জমা দেওয়ার সময়ই জানা যাবে কে হতে যাচ্ছেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।

গতকাল (শনিবার) বিকাল পর্যন্ত এ পদে নির্বাচন কমিশন থেকে কেউ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি। গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় দলের বৈঠকে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার হাতে রাষ্ট্রপতি মনোনয়নের দায়িত্ব অর্পণ করেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা। কাজেই রাষ্ট্রপতি পদের জন্য কার নামে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়া হবে- দিন শেষে তিনিই তা ঠিক করবেন। ফলে এ পদে কে পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তা জানতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুসারে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার শেষ সময় কাল ১২ ফেব্রুয়ারি। এদিন নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বান কমিশনারের (সিইসি) কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে পরদিন অর্থাৎ ১৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে যতক্ষণ সময় লাগে।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় ১৪ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ মঙ্গলবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এরপর জাতীয় সংসদ ভবনে রাষ্ট্রপতি পদে ভোট নেওয়া হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। শুধু সংসদ সদস্যরাই ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন। তবে যদি একাধিক প্রার্থী না থাকে সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। একের অধিক প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীই রাষ্ট্রপতি হবেন। কারণ বর্তমান সংসদে শাসক এ দলটির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।

৩৫০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে বর্তমানে আওয়ামী লীগের আছে ৩০৫টি এবং প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৭টি। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৪টি আসন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ৩টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ এবং গণফোরামের ২টি করে, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন এবং জাতীয় পার্টির (জেপি) একটি করে আসন রয়েছে। বাকি ৪টি আসনে রয়েছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য।

বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ ২৩ এপ্রিল শেষ হচ্ছে। এর আগেই ক্ষমতাসীনদের বেছে নিতে হবে তার পরবর্তী উত্তরাধিকারীকে। কে হচ্ছেন নতুন রাষ্ট্রপতি- এ নিয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে নানারকম আলাপ-আলোচনা ও গুঞ্জন আছে। আছে নানা মত। রাজনীতির অন্দরমহলেও এই পদের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির নাম আলোচিত হচ্ছে। তবে আলাপ-আলোচনা যাই থাকুক না কেন, দিন শেষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

তৃণমূল থেকে উঠে আসা বর্ষীয়ান ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ মো. আবদুল হামিদ বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রপতি, যিনি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথমে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন তিনি। পাঁচ বছর মেয়াদপূর্তির পর ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

সংবিধান অনুযায়ী তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একজন রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন। সংবিধানের ৫০(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘একাধিক্রমে হোক বা না হোক, দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।’

ফলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. আবদুল হামিদের চলতি মেয়াদই শেষ। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পর্কে সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে উক্ত পদ শূন্য হইলে অথবা মেয়াদ শেষ হইলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে শূন্যপদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে একজন দলনিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসেবে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে রাষ্ট্রপতি করে আওয়ামী লীগ। তবে সেই অভিজ্ঞতা দলটির জন্য খুব একটা সুখকর ছিল না।

এরপর ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ দলটির সাধারণ সম্পাদক ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ মো. জিল্লুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে। তার মৃত্যুর পর এ পদে অধিষ্ঠিত হন আরেক প্রবীণ রাজনীতিবিদ মো. আবদুল হামিদ। আগামী দিনেও শেখ হাসিনা বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন ব্যক্তিকেই বেছে নেবেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা হিসেবে।

১৯৯১ সালে পরোক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সাতবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একবার রাষ্ট্রপতি পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় সংসদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়। আর ওই সময়ের বিরোধী দল ও বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছিল বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীকে। ওই নির্বাচনে আব্দুর রহমান বিশ্বাস জয়ী হন। এছাড়া প্রতিবার একক প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন।