গুলিস্তানে ভবনে বিস্ফোরণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখতে নারাজ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি এ ঘটনায়ও সরকারের ব্যর্থতা খুঁজছে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই শীর্ষস্থানীয় নেতা আজ ঢাকায় পৃথক দুটি অনুষ্ঠানে একে অপরকে দোষারোপ করে বক্তব্য দেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, এসব ঘটনা ‘রহস্যজনক’। ‘আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে’ বিএনপি নাশকতা করছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখার কথাও তিনি বলেন।
চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডে, ঢাকার মিরপুর রোডে বিস্ফোরণের রেশ কাটতে না কাটতে রাজধানীর গুলিস্তানে বড় বিস্ফোরণে ১৭ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এর নেপথ্যে ‘কী?’, এই প্রশ্ন যখন মুখে মুখে, তখন এসব কথা বললেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।
বুধবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বুধবার এক যৌথ সভায় তিনি বলেন, এসব রহস্যজনক ঘটনার পেছনের কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা বা দলের সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। নাশকতামূলক ঘটনা ঘটানো হচ্ছে কিনা, তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তারা সিরিয়াসলি খতিয়ে দেখছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে থাকার সময় ঢাকা ও চট্টগ্রামে বেশ কিছু বিস্ফোরণ, একই সময়ে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন; চার দিনের মধ্যে এতগুলো ঘটনা স্বাভাবিক নয়।
এই বিস্ফোরণের ঘটনায় এর আগে সরকারকে দায়ী করে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার যুক্তি হল, ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের সংস্থা আছে। কিন্তু সেগুলো ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করে না। আর তাদের এই ‘ব্যর্থতা’র কারণে ঘটছে এসব ঘটনা।
ওবায়দুল কাদের যখন বিএনপিকে জড়িয়ে এই বক্তব্য রাখছিলেন, একই সময়ে রাজধানীতে এক দলীয় আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত কয়েকদিন ধরে দেখছেন শুধু বিস্ফোরণ হচ্ছে। কীভাবে বিস্ফোরণ হচ্ছে? সরকারের যে ডিপার্টমেন্টগুলো আছে, যাদের এসব ভবন দেখাশোনা করার কথা, যাদের নজরদারি করার কথা, তারা কাজ করে না, সব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।
আগের দিন এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এসব বিস্ফোরণের ধরন প্রায় একই রকম হওয়ায় জনমনে সন্দেহ বাড়ছে। এসব ঘটনা পরিকল্পিত কি না, তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
ওবায়দুল কাদের আজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন দেশের কাজে বাইরে, ঠিক সেই সময় আমাদের দেশে কয়েকটি অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটনা ঘটে গেছে। এটা নাশকতা কিনা স্বাভাবিক দুর্ঘটনা, অথবা নাশকতা, সেটা সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গুলিস্তান, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, কক্সবাজারের বালুখালীর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, তা বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে ঘটিয়েছে কিনা, খতিয়ে দেখছে সরকার বলেও জানান কাদের।
মঙ্গলবার গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারে ক্যাফে কুইন নামের একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে; এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তার দুদিন আগের মিরপুর রোডে বিস্ফোরণে তিনতলা একটি ভবনের আংশিক ধসে পড়ে। তাতে মৃত্যু হয় তিনজনের। ওইদিনই কক্সবাজারে উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে আগুনে পুড়ে যায় প্রায় দুই হাজার ঘর।
তার আগের দিন শনিবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বেসরকারি সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণে সাতজনের মৃত্যু হয়।এসব ঘটনাকে স্বাভাবিক বলতে নারাজ ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মহানগর, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাদের নিয়ে সভায় আজ ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনে ব্যর্থতা যাদের, তারা এখন আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে নাশকতার পথ খুঁজছে কিনা, নাশকতার পথে হাঁটছেন কিনা, সেটাও আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি।
এসব ঘটনা নিয়ে বিএনপি নেতাদের মাথা না ঘামানোরও পরামর্শ দেন কাদের। তিনি বলেন, কারও মাথা ব্যাথার প্রয়োজন নাই। মির্জা ফখরুল হুট করে একটা বিবৃতি দিয়েছেন। তার বিবৃতির ভাষা হচ্ছে যে, এই ধরনের একের পর এক ঘটনার রহস্যজনক।
তিনি বলেন, আমরা তার সঙ্গে একমত। এই সময়ে দেশে এই ধরনের ঘটনা রহস্যজনক। এই রহস্যের ভিতরের বিষয়টি কী, সেটা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আব্দুর রহমান, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক আব্দুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান যৌথ সভায় ছিলেন।