বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহবায়ক প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন পুরোপুরি বিপন্ন। সাংবাদিকরা সত্য লিখতে গেলে বিশেষ করে সরকারের বিপক্ষে যায় এমন খবর ছাপলে হয় গণমাধ্যম বন্ধ করে দিচ্ছে, না হয় সাংবাদিকদের উপর জুলুম নির্যাতন নেমে আসছে। বর্তমান সরকারে এপর্যায়ের শাসনকালে পঞ্চাশেরও বেশি সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। বহু সম্পাদক ও সাংবাদিককে দেশান্তরী হতে হয়েছে। দেশের শীর্ষ পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে খুনের মামলা। সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট, গুম-খুনের কথা যাতে প্রকাশ না পায় সেজন্য দৈনিক দিনকাল বন্ধ করে দিয়েছে সরকাএ।
আজ সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দৈনিক দিনকাল বন্ধের প্রতিবাদে গণতন্ত্র ফোরাম আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব বলেন।
গণতন্ত্র ফোরামের সভাপতি ভিপি ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে ও ইসমাইল হোসেন সিরাজীর সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, স্বাধীন ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মাদ রহমত উল্লাহ, সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিস ইসলাম, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি রাশেদুল হক, ইঞ্জিনিয়ার হানিফ,ব্যারিস্টার ওবায়দুর রহমান টিপু, শাহ আবদুল্লাহ আল বাকি, আবদুর রহিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ডা. জাহিদ বলেন,দেশে চলছে চরম দুঃসময়। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, মানবাধিকার কর্মী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, যারা গণতন্ত্রের পক্ষে সোচ্চার, তারা সরকারি জুলুমের শিকার হয়ে কেউ গুম হচ্ছেন, কেউ পঙ্গু হচ্ছেন, অথবা চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী জনগণের ওপর ফ্যাসিবাদি জুলুম চালাচ্ছে।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, গণমাধ্যমকে হুমকি ও ভয় দেখিয়ে এবং সাংবাদিকদের হত্যা ও নির্যাতন করে কন্ঠরোধ করা হচ্ছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা কালাকানুনের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে।বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিকাশ সাধিত হলেও বাংলাদেশে একের পর এক গণমাধ্যম বন্ধ করা হচ্ছে। এই সরকারের সময়পাঁচশতাধিক গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এসব কুকর্মের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে বর্তমান সরকার ‘গণতন্ত্রের হন্তক” খেতাব পেয়েছি। জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য লজ্জার।’
সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, বর্তমানে সংবাদপত্র এবং ভিন্ন মত ও সত্য প্রকাশের স্বাধীনতার এমনভাবে গলা চেপে ধরা হয়েছে যে, দেশের সকল গণমাধ্যম সত্য প্রচারে শংকিত থাকে, না জানি কখন সরকারের রোষানলে পড়তে হয়।স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে অসংখ্য সাংবাদিককে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছেন, মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করতে হয়েছে। এমনকি গুম ও হত্যাকাণ্ডেরও শিকার হতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা ছিল বাংলাদেশের ভৌগলিক স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র। গণতন্ত্রে মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়। মানুষের স্বাধীনতার মূল শর্ত হচ্ছে বাক, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার মধ্যে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। কিন্তু স্বাধীনতাত্তোর ক্ষমতাসীনরা স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল-স্পিরিটের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথচলাকে স্তব্ধ করে দেয় একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা কায়েম করে। বর্তমান সরকার সেই একই নোংরা পতেই হাঁটছেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ মূলত চিন্তা ও বিবেককে বন্দি রাখা বলে উল্লেখ করেন তিনি।