বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকারের যদি সুবুদ্ধি হয় ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করে তাহলে তাদের জন্য ভালো। আর যদি তা না করে তাহলে যুগে যুগে স্বৈরাচারী সরকারের যে অবস্থা হয়েছে, হিটলার-মুসোলিনির যে অবস্থা হয়েছে সেই অবস্থা হবে। এছাড়া এ সরকারের অন্য কোনো উপায় বা বাঁচার পথ থাকবে না।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা তারিকুল আলম তেনজিং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী বলেন, ভেতরে ভেতরে সরকার আত্মশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। এখন তাদের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। এ সরকার বিভিন্নভাবে ডিজিটাল আইন দিয়ে ভয়ের রাজ্য তৈরি করেছে। কিন্তু সেই আইনের মাধ্যমে তারা নিজেরাই পরাজিত হচ্ছে, এটা তারা টের পাচ্ছে না। হয়তো টের পাচ্ছে, কিন্তু বলছে না।
তিনি বলেন, যে সরকারের পক্ষে জনসমর্থন থাকে না, তারা নানা কায়দা-কানুন করে জুলুম নির্যাতন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিজেদের লোক বসিয়ে কিছুদিন ক্ষমতায় থাকতে পারে। কিন্তু দীর্ঘদিন থাকতে পারে না। এ সরকার দেশ ও জনগণের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যর্থ। এ সরকার বিভিন্ন সময়ে জনগণকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে রাতের বেলা ব্যালট বাক্স পূর্ণ করেছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন করেছে এইটা এবার তারা করতে পারবে না। কারণ নানা স্তরের মানুষ এ সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। কর্তৃত্ববাদী সরকার কখনও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকতে পারে না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রকামী, গণতন্ত্রহীনদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যই বিএনপির কর্মসূচিগুলো পালন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বিএনপি ইউনিয়ন পর্যায়ে, উপজেলা পর্যায়ে, জেলা পর্যায়ে যেসব কর্মসূচি হয়েছে সেগুলোতে ব্যাপক হারে জনসমর্থন পেয়েছে। এ আন্দোলনগুলো সফল হয়েছে। যদি ব্যর্থ হতো তাহলে সরকার এত ধরপাকড় করত না। বিএনপির জনসমর্থন দিন দিন বাড়ছে বলেই সরকার এত ব্যাপকহারে গ্রেপ্তার করেছে ও এখনো করছে। এত ধরপাকড় করেও যখন বিরোধীদলকে থামাতে পারে না তখন বুঝতে হবে এ সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য যুগে যুগে বিভিন্ন দেশে কত আন্দোলন বিপ্লব হয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি এই আন্দোলনে আমাদের অনেক সাথীকেই হারিয়েছি, তারপরও কেউ দমে যায়নি। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ দমে যাবে না।
‘নির্বাচন নিয়ে সংবিধানের বাহিরে যাওয়ার সুযোগ নেই’ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এ প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, আপনারা (সাংবাদিক) তাদেরকে প্রশ্ন করতে পারতেন সুযোগ নেই কেন? এটা কী আটলান্টিক মহাসাগর যে নৌকা ছাড়া পার হওয়া যাবে না। সংবিধানের মধ্যেই সংবিধান সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। ওরা গায়ের জোরে কথা বলছে। এটা কোনো রাজনৈতিক পরিভাষা হতে পারে না। তাহলে ১৯৯৫-৯৬ সালে হল কেমন করে? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য তারা ধ্বংসাত্মক আন্দোলন করেছে, পুলিশ-নেতাকর্মী-ছাত্র সবাইকে হত্যা করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছে। আর ক্ষমতায় এসেই তা বাতিল করেছে। তাহলে আপনারা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। যারা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করে তারা কোনোদিনই জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে, আর আমরা খালি গায়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের তারা দমাতে পারবে না। তারা মনে করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়েই তারা ক্ষমতায় থাকবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমরা দেখেছি মানবাধিকারের জন্য জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য গণতন্ত্রের জন্য খালি হাতে লড়াই করেছে এবং তারাই জয়ী হয়েছে। তবে এটা একদিনে সম্ভব না। এ দানব সরকারের বিরুদ্ধে এ লড়াই আরও দীর্ঘদিন হতে পারে।