মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীকে পদাধিকার বলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) চেয়ারম্যান করার আইন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত
আলী চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ রুল জারি করেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীকে পদাধিকার বলে জামুকার চেয়ারম্যান এবং সচিবকে সদস্য পদে নিয়োগ সংক্রান্ত আইনের বিধান কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। আইন সচিব, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিবাদীদের এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সেইসঙ্গে রিট আবেদনকারী নওয়াব আলী মণ্ডলের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করে তার ভাতা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালতে রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম টিপু। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনের ৫(১)(ক) ও ৫(১)(খ) ধারা অনুসারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও সচিব পদাধিকার বলে যথাক্রমে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রণালয়ে যদি প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকেন, তারা পদাধিকার বলে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
বগুড়ার নওয়াব আলীর দায়ের করা রিট আবেদনে বলা হয়, যেহেতু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এবং সচিব একইসঙ্গে জামুকার সর্বোচ্চ পদে আসীন, ফলে তারা জামুকার নির্বাহী প্রধান হিসেবে যে সুপারিশ করেন, মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব হিসেবে সেটাই ‘মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত’ হিসেবে প্রকাশ করেন।
তাছাড়া জামুকা একজন মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয় বরাবরে সুপারিশ করলে মন্ত্রণালয় তা করার আগে অভিযোগ খণ্ডানো বা শুনানির কোনো সুযোগ দেয় না।
আবেদনে বলা হয়, আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী জামুকার চেয়ারম্যান হিসেবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী জামুকার সব নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী; আবার মন্ত্রণালয়েরও প্রধান তিনি। সে কারণে জামুকা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কার্যত একই প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে তদন্তকারী এবং বিচারক একই ব্যক্তি, যা ন্যায়বিচার নীতির ‘পরিপন্থি’।
এই যুক্তি দেখিয়ে মন্ত্রী ও সচিবকে বাদ দিয়ে জামুকার বাকি সদস্যদের মধ্যে থেকে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নিয়োগের বিধান করার আর্জি জানানো হয়েছে রিট আবেদনে।
রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম টিপু বলেন, যেহেতু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও সচিব একই সঙ্গে জামুকার সর্বোচ্চ পদে আসীন। এর ফলে তারা জামুকার নির্বাহী প্রধান হিসেবে যে সুপারিশ করেন, মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব হিসেবে সেটাই ‘মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত’ হিসেবে প্রকাশ করেন। এ ছড়া জামুকা যখন একজন মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয় বরাবর সুপারিশ করে, মন্ত্রণালয় গেজেট বাতিলের আগে তাকে কোনো ধরনের অভিযোগ খণ্ডানোর বা শুনানির সুযোগও দেয় না। শুধু জামুকার সুপারিশ মোতাবেক গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। সে কারণে প্রকৃত অর্থে জামুকা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় একই প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আর তদন্তকারী ও বিচারক একই ব্যক্তি। এটা প্রতিষ্ঠিত ন্যায়বিচার নীতির পরিপন্থি।
২০০৫ সালে নওয়াব আলী মণ্ডলকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেওয়া হয় এবং ওই বছরই তার নাম গেজেটভুক্ত হয়। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত সম্মানী ভাতাও পেয়ে আসছিলেন। তবে গত বছরের ১৮ অক্টোবর জামুকার ৮১তম সভায় তার গেজেটটি বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশ অনুসারে মন্ত্রণালয় চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। পরে গেজেট বাতিলের প্রজ্ঞাপন, ভাতা বন্ধ, জামুকার চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসেবে মন্ত্রী ও সচিবের নিয়োগসংক্রান্ত আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন নওয়াব আলী।