মোবাইলে পরিচয়। কথা বলতে বলতে নোয়াখালীতে থাকা নূর নাহার এবং ওমানে থাকা আলতাফের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নূর নাহার দুই সন্তানের মা। দেশে সংসার আছে আলতাফেরও। ১০ বছর ওমানে কর্মরত থাকলেও তার অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। নূর নাহার তাকে আর্থিক সহযোগিতা ও আড়াই লাখ টাকা ঋণ পরিশোধের আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে নিজের বাড়ির নিচতলায় ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকার ব্যবস্থা করে দেবেন বলে জানান। এই আশ্বাসে গত বছরের ৮ জুন দেশে আসেন আলতাফ। আশ্বাস অনুযায়ী সহযোগিতা না পাওয়ায় ঘটে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা। এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নোয়াখালীর মাইজদীতে বাড়িতে ঢুকে নূর নাহার বেগম (৩৫) ও তাঁর মেয়ে ফাতেমা আজিম প্রিয়ন্তীকে (১৬) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় স্থানীয়রা ধাওয়া দিয়ে রক্তমাখা অবস্থায় আলতাফ হোসেনকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় সুধারাম মডেল থানায় সংবাদ সম্মেলন করেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, আলতাফ সন্ধ্যায় নোয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোসলেহ উদ্দিন মিজানের আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার আরও বলেন, নিহত নূর নাহার বেগমের স্বামী ফজলে আজিম কচি জেলা শহরে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চাকরি করেন। ওই বাড়ির দোতলায় তিনি স্ত্রী নূর নাহার, মেয়ে প্রিয়ন্তী ও ছেলে রবিউল আলম হৃদয়কে নিয়ে থাকেন। নিচতলায় ভাড়াটেরা থাকেন। প্রিয়ন্তী চলতি বছর স্থানীয় হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ছেলে হৃদয় একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র।
তিনি বলেন, আলতাফ লক্ষ্মীপুরের রামগতির চরমেহের গ্রামের মৃত আবুল কালামের ছেলে। দেশে ফিরে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নোয়াখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড মধুপুর এলাকায় থাকতেন। আলতাফ একাধিকবার নূর নাহারের সঙ্গে দেখা করে ব্যবসার জন্য টাকা চান। কিন্তু নূর নাহার তাকে টাকা দেওয়ার কথা বলে ঘোরাচ্ছিলেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার দুপুরে নূর নাহারের স্বামীর অনুপস্থিতিতে আলতাফ বাসায় এসে টাকা চায়। নূর নাহার তাকে বুধবার আসার জন্য বলেন। এক পর্যায়ে আলতাফ বুঝতে পারে, নূর নাহার তাকে টাকা দেবেন না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বুধবার সকালে আলতাফ ভয়ভীতি দেখানোর জন্য ফুটপাত থেকে একটি ছুরি কিনে নূর নাহারের বাসায় যায়। এ সময় নূর নাহারের মেয়ে প্রিয়ন্তী ঘুমে ও ছেলে হৃদয় স্কুলে ছিল। ফাঁকা বাসায় নূর নাহার ও আলতাফের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে নূর নাহার আলতাফকে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেন। এ পর্যায়ে আলতাফ ছুরি দিয়ে নূর নাহারকে উপর্যুপরি আঘাত করে। এ সময় মায়ের চিৎকারে প্রিয়ন্তীর ঘুম ভেঙে গেলে সে দৌড়ে আসে। আলতাফ ভয়ে তাকেও উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের হাতে ধরা পড়ে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন-অর্থ) বিজয়া সেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোর্তহীন বিল্লাহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) নাজমুল হাসান রাজিব, সুধারাম মডেল থানার ওসি আনোয়ারুল ইসলাম ও ডিবির ওসি নাজিম উদ্দিন আহমেদ।
এর আগে সকালে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন-অর্থ) বিজয়া সেন জানিয়েছিলেন, পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে, হত্যাকাণ্ডে তিনজন অংশগ্রহণ করেছিল। তাদের মধ্যে দু’জন পালিয়ে গেছে। আটক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশ সেগুলো নিয়ে কাজ করছে।
বুধবার বিকেলে প্রিয়ন্তীর খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে তার সহপাঠী ও বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে।