সম্প্রতি চারজন ইসরাইলিকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা অধিকৃত পশ্চিম তীরের বেশ কয়েকটি ফিলিস্তিনি শহর ও গ্রামে বাসিন্দাদের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং তাদের জলপাই বাগান ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দু’জন ফিলিস্তিনি বন্দুকধারী অধিকৃত পশ্চিম তীরের একটি পেট্রোল পাম্পে ইসরাইলিদের ওপর গুলি চালানোর কয়েক ঘণ্টা পর প্রায় ১০০ জন ইহুদি বসতি স্থাপনকারী ফিলিস্তিনি শহর হুওয়ারাতে তাণ্ডব চালায় বলে জানা গেছে।
ওই শহরেই গত ফেব্রুয়ারি মাসে দুই ইসরাইলি ভাইকে হত্যার পর বসতি স্থাপনকারীরা বড় ধরনের প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালিয়েছিল।
বিবিসির মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সংবাদদাতারা জানিয়েছে, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ অবৈধ বলে বিবেচনা করে পশ্চিম তীরের এমন একটি বসতিতে শত শত ইহুদি সেটেলার জড়ো হয়। তাদের দাবি, মঙ্গলবারের আক্রমণের পাল্টা হিসেবে সেখানে নতুন বসতি স্থাপন অনুমোদন করতে হবে।
আরেকটি শহর জেনিনে সোমবার একটি বড় ইসরাইলি অভিযানের সময় আহত ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর মৃতু হয়েছে বুধবার সকালে। ওই অভিযানে এর আগে সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
মঙ্গলবার ইলাই নামে একটি ইহুদি বসতির বাইরে একটি রেস্তোরাঁ ও পেট্রোল স্টেশনে দুই ফিলিস্তিনি বন্দুকধারী হামলা চালালে একটি কিশোরসহ চারজন ইসরাইলির মৃত্যু হয়। এছাড়া আরো চার ব্যক্তি আহত হয়, এদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।
গাজা ভিত্তিক ইসলামী প্রতিরোধ সংগঠন হামাস বলছে, হামলাকারীরা তাদের সদস্য।
ওই ঘটনায় একজন সশস্ত্র ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়, অন্যজন একটি চুরি করা গাড়িতে চড়ে পালিয়ে যায় এবং পরে তুবাস শহরে ইসরাইলি বাহিনীর হাতে নিহত হয়।
পশ্চিম তীরে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সহিংসতা বৃদ্ধির প্রসঙ্গে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মর্মান্তিক ও ঘৃণ্য সন্ত্রাসী হামলা। হামলার বিরুদ্ধে তাদের সব ধরনের বিকল্প পথ খোলা রয়েছে।
হামাসের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, সোমবার জেনিনে ইসরাইলি সামরিক অভিযানে সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিল এবং তার প্রতিশোধ হিসেবে ইলাইতে হামলা চালানো হয়।
ইলাইতে গুলিবর্ষণের কয়েক ঘণ্টা পর ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা কাছাকাছি বেশ কয়েকটি ফিলিস্তিনি শহর ও গ্রামে আক্রমণ চালায়। তারা ইট-পাথর নিক্ষেপ করে এবং যানবাহন, সম্পত্তি ও জলপাই বাগানে আগুন ধরিয়ে দেয়।
নাবলুস অঞ্চলের এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা ঘাসান দাঘলাস বার্তা সংস্থা ওয়াফা নিউজ অ্যাজেন্সিকে জানিয়েছেন, ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় মোট ১৪০টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা তাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। নিজেদের রক্ষা করতে গিয়ে ৩৪ জন ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক রাবার বুলেট ও টিয়ার-গ্যাসের আঘাতে আহত হয়েছে।
ফিলিস্তিনি হামলার ঢেউ সামাল দেয়ার জন্য ইসরাইলের জোট সরকারের উগ্র-ডানপন্থী দলগুলো উত্তর-পশ্চিম ফিলিস্তিনের একটি বড় সামরিক অভিযান শুরু করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর চাপ প্রয়োগ করছে।
ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা-মন্ত্রী ইতামার বেন-গেভির সাংবাদিকদের বলেছেন, বিমান থেকে টার্গেটেড হত্যাকাণ্ডে ফিরে আসার, বোমা ব্যবহার করে ভবন ধ্বংস করার, রাস্তা অবরোধ করার, সন্ত্রাসীদের বিতাড়িত করার ও সন্ত্রাসীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দিন ফিরে এসেছে।
চলতি বছরের শুরু থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুসালেম ও গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনী বা ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের হাতে ১৬০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এই পরিসংখ্যানে বেসামরিক মানুষও রয়েছে।
ফিলিস্তিনিদের হামলায় ইসরাইলি পক্ষে নিহত হয়েছে ২৭ জন, যার মধ্যে রয়েছে দু’জন বিদেশী ও একজন ফিলিস্তিনি কর্মী।
সূত্র : বিবিসি