ঈদ সামনে রেখে রাজধানীর অস্থায়ী হাটগুলোতে গরু-ছাগল নিয়ে এসেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খামারিসহ বিক্রেতারা। কয়েকদিন আগেই হাটগুলোতে পশু আনা হয়েছে। তবে বেচাকেনা তেমন হয়নি। আজ রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে হাট শুরু হচ্ছে। এতে পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন খামারিরা।
বিক্রেতারা জানান, হাটে অনেক ক্রেতা আসছেন, তাঁরা ঘুরে ঘুরে গরু দেখছেন। পশুখাদ্যের দাম বাড়ায় এ বছর গরু-ছাগলের দাম বেশি। তাই ক্রেতাদের বেশি পছন্দ ছোট ও মাঝারি আকারের গরু। হাটে আসা ক্রেতাদের দাবি, এবার দাম বেশি। এ ছাড়া গরু কিনে রাখার জায়গা নেই। তাই তাঁরা বাজার ঘুরে ঈদের দু-এক দিন আগে গরু কিনবেন। এদিকে অস্থায়ী পশুর হাটে এ বছরও ডিজিটাল লেনদেনের ব্যবস্থা রেখেছে সিটি করপোরেশন। প্রতিটি হাটে ব্যাংকের বুথ, জাল নোট শনাক্তের মেশিন, পুলিশের ওয়াচ টাওয়ার ও নিরাপত্তা চৌকির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট হাট’ স্লোগানে ডিএনসিসির আটটি অস্থায়ী পশুর হাটে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন ব্যবস্থা থাকবে। এই হাটগুলো হবে স্মার্ট হাট। ইতোমধ্যে ১০ হাজার খামারির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে এই লেনদেনের জন্য। তাই টাকা নিয়ে হাটে যেতে হবে না। গরুর মালিকরাও বাড়ি ফেরার সময় সমস্যায় পড়বেন না। ’
ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, ‘পশুর হাটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি হাটে বেসরকারি ব্যাংকের বুথ থাকবে। জাল নোট শনাক্তের ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা চৌকি থাকবে।’
সরেজমিন দেখা যায়, হাটগুলোতে গত বুধবার থেকেই খামারিরা গরু নিয়ে এসেছেন। তাঁদের থাকা ও খাবারের জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। গ্রামের চেয়ে ঢাকায় গরুর দাম তুলনা মূলক বেশি, তাই বাড়তি লাভের আশায় আগেভাগেই এসেছেন বিক্রেতারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন ক্রেতার দেখা মেলেনি। স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীতে দেখা যায়, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পশুর সংখ্যা অনেক কম। বহু লাখ টাকার ২০ থেকে ৩০ মণ ওজনের গরুর সংখ্যাও তেমন নেই। এ হাটে কোরবানির আগে প্রতিবছর ব্যবসায়ীরা উট নিয়ে এলেও এবার কোনো উট দেখা যায়নি। তবে ২ থেকে ৪ লাখ টাকার মধ্যে দুম্বা নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ী। খামারিরা জানান, গরুর দাম তুলনামূলক বেশি, ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম।
পোস্তগোলা শ্মশানঘাট এলাকার বেড়িবাঁধে ৪০টি গরু নিয়ে এসেছেন চুয়াডাঙ্গার আলামিন মিয়া। বৃহস্পতিবার তিনি গরু নিয়ে এসেছেন। এখন পর্যন্ত চারটি গরু বিক্রি হয়েছে। তিনি জানান, ‘এলাকায় মুদি দোকানের পাশাপাশি তাঁর নিজের খামার আছে। প্রত্যেক বছর কোরবানির ঈদের পর গরু কিনে বড় করেন। এ বছর ৪০টি গরুর মধ্যে ১৫টি দেশি, ১৫টি শাহিওয়াল, পাঁচটি ফ্রিজিয়ান ও পাঁচটি নেপালি গরু নিয়ে এসেছেন। শাহিওয়াল ও নেপালি গরুর ওজন ৮ থেকে ৯ মণ। ৪০টি গরু ১ কোটি টাকার বেশি বিক্রি করার আশায় এসেছেন। তিনি জানান, আগে ধানের খড় থেকে ভুসি ও অন্যান্য খাদ্যের দাম তুলনামূলক সস্তা ছিল। এখন দাম বেড়েছে অনেক। গরুপ্রতি খরচ হয়েছে বেশি। তাই দামও প্রায় ৩০ শতাংশের ওপরে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ধোলাইখাল ট্রাকস্ট্যান্ড পশুর হাটে ফরিদপুর থেকে আসা জগলুল হায়দার জানান, ‘চার দিন আগেই ১৫টি গরু নিয়ে এসেছি। স্থানীয় হাটের চেয়ে এখানে গরুপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেশি পাওয়া যাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ক্রেতার দেখা নেই। যাঁরা আসেন, তাঁরা ছবি তুলেই চলে যান। কমলাপুর হাটে আসা বিসমিল্লাহ ডেইরির মালিক রফিক মিয়া জানান, এ বছর তেমন ভাব বোঝা যাচ্ছে না। যাঁরা আসছেন, তাঁরা মাঝারি আর ছোট গরুর দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। সবকিছুর দাম বেড়েছে, মানুষের হাতে টাকা নেই।
মালিবাগের শাহরিয়ার খান বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি নওগাঁয়। এ বছর ঢাকায় ঈদ করব। আগেভাগেই গরু কিনব ভাবছিলাম; কিন্তু রাখার জায়গা নেই। বাসার মালিক ঈদের আগ মুহূর্তে গরু কিনতে পরামর্শ দিয়েছেন।’ যাত্রাবাড়ীর দনিয়া এলাকার পশুর হাটের ইজারাদার কামরুজ্জামান বলেন, ‘এ বছর হাটে মাঝারি আকারের গরুর সংখ্যা বেশি। প্রত্যেক বছর ২০ থেকে ২৫ মণ ওজনের অনেক গরু আসে হাটে। খামারিরা ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত এসব গরুর দাম হাঁকান; কিন্তু এ বছর এ রকম গরুর সংখ্যা খুব কম।