দেশবার্তা

ফরিদপুরে প্রান্ত মিত্র হত্যায় গ্রেপ্তার ৪

ফরিদপুরে রাজেন্দ্র কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রান্ত মিত্র হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছে থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়।

বুধবার দুপুর ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহজাহান।

গ্রেপ্তাররা হলেন- শহরের গুহলক্ষীপুর এলাকার শাহীন শেখের ছেলে সজীব শেখ (২৩), একই এলাকার সামাদ শেখের ছেলে মাসুম শেখ (৩৪), চরমাধদিয়া ইউনিয়নের আবু তালেব মল্লিকের ছেলে ইসরাফিল মল্লিক (৩৪) ও টেপাখোলা এলাকার লিটন ব্যাপারীর ছেলে সিফাতুল্লাহ ব্যাপারী (১৯)।

পুলিশ সুপার বলেন, প্রান্ত মিত্র হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, চাপাতি, সেভেন গিয়ার চাকু ও রেঞ্জসহ হত্যার সময় হত্যাকারীর গায়ে থাকা রক্তমাখা জামা-কাপড়, জুতা ও বেল্ট উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই রাতে তারা শহরের আরও তিনটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায়। আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। বুধবার আসামিদের আদালতে সোপর্দ করে অধিকতর তদন্তের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

তিনি বলেন, আসামিদের মধ্যে ইসরাফিল ও সজিবের ছিনতাইয়ের আলাদা আলাদা বাহিনী রয়েছে। সজিব ও ইসরাফিল আলাদাভাবেও ছিনতাই করতে বের হয়। কারাগারে ইসরাফিল, সজিব ও সিফাতুল্লাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে উঠে। সজিবের বিরুদ্ধে ছয়টি ও ইসরাফিলের বিরুদ্ধে নয়টি ডাকাতি প্রস্তুতি, ছিনতাই ও মাদক মামলা রয়েছে। তারা মূলত মাদকসেবন ও যৌনপল্লিতে ফুর্তি করার জন্য ছিনতাই করতো।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে সজিব, ইসরাফিল ও সিফাতুল্লাহ প্রান্তর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তারা মাসুম শেখের মোটরসাইকেল নিয়ে ছিনতাই করতে বের হয়। ওই রাতে তাদের প্রথম টার্গেট হন প্রান্ত। তারা আলীপুর ব্রিজের পূর্বপাশের সড়কে প্রান্তরের রিকশার গতি রোধ করে। ওই সময় প্রান্ত রিকশা থেকে নামতে গেলে তাকে ঝাপটে ধরে তারা। প্রান্ত মোবাইলফোন ও মানিব্যাগ দিতে অস্বীকার করলে সজিব তার হাতে থাকা চাকু দিয়ে আঘাত করে। এতে প্রান্ত মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে আসামিরা পালিয়ে যায়।

‘এ ঘটনায় আমরা প্রান্তকে বহনকারী রিকশাচালককে শনাক্ত করি। ওই চালকের কাছে ওই রাতের বর্ণনা শুনে নিশ্চিত হই এটা ছিনতাই করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ড। চালক জালাল মিয়া আসামিদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।’

শাহজাহান বলেন, প্রান্তকে হত্যার আধা ঘণ্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে লাশের সুরতহাল তৈরিতে ব্যস্ত থাকার সুযোগে গ্রেপ্তাররা রাত পৌনে ৪টার দিকে শহরের বাদামতলী সড়কে এক সবজি বিক্রেতার কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা ছিনতাই করে। এরপর তারা সোয়া ৪টার দিকে শহরের ঝিলটুলি পুরাতন পাসপোর্ট অফিসের মোড়ে এক ইমামের কাছ থেকে মোবাইলফোন ও নগদ ৭০০ টাকা ছিনতাই করে। তারপর ভোর পৌনে ৫টার দিকে তারা শহরের তেতুলতলা মান্নান হেরিটেজের সামনে জেলা জাকের পার্টির সভাপতি জাদু মিয়াকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তার মোবাইলফোন ছিনিয়ে নেয়।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ জুলাই দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে হৃদয় নামে এক বন্ধুর ফোন পেয়ে শহরের ওয়ারলেসপাড়ার বাসা থেকে রিকশায় করে শিশু হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে ছুরিকাঘাতে নিহত হন প্রান্ত। এর দুদিন পর ২৭ জুলাই দিবাগত রাতে প্রান্তের বাবা বিকাশ মিত্র অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় এ মামলা করেন।