দেশবার্তা

কুমিল্লায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১৫

কুমিল্লায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে গুলি ছুড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার দুপুর ২টার দিকে জেলার লালমাই উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের গৈয়ারভাঙা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

হামলায় দুজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সন্ধ্যায় বিএনপির নেতাকর্মীরা এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

বিএনপি নেতাকর্মীরা বলেন, শনিবার দুপুর ২টায় লালমাই উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলামের বাড়িতে কর্মীসভার আয়োজন করা হয়। এতে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। দুপুর ২টার দিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আয়াত উল্লাহর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা গৈয়ারভাঙা বাজারে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে।

বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, গৈয়ারভাঙা বাজারে মিছিল করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উন্দানিয়া গ্রামে গিয়ে বিএনপির সভাস্থলের মঞ্চ, চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন এবং বিএনপির নেতা মফিজুল ইসলামের বাড়িতে লুটপাট চালায়। এ সময় আতঙ্কে মানুষ ছোটাছুটি করে পালাতে থাকেন। একপর্যায়ে অস্ত্রধারীরা গুলি চালায়। এতে বিএনপির কর্মী মনির হোসেনের মাথায় গুলি লাগে। উপজেলা যুব দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আহমেদ খানের পায়ে ও পেটে গুলি লাগে। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। হামলার সময় বিএনপির সভাস্থলের মঞ্চ ও চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করা হয়।

বেলঘর উত্তর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম জানান, হামলার সময় তার উন্দানিয়া গ্রামের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেল ও চেয়ার ভাঙচুর করা হয়।

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, অর্থমন্ত্রীর ভাতিজা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম শাহীন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আয়াত উল্লাহর নেতৃত্বে এ হামলা করা হয়। আমরা কি কর্মীসভাও করতে পারব না? আগেও বাকই উত্তর ইউনিয়নে আমার কর্মীসভায় ভন্ডুল করা হয়েছে। চেয়ার-টেবিল ভাংচুর করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত নেতাকর্মীদের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখে এসেছি।

কুমেক হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ শরিফ বলেন, আহত হয়ে হাসপাতালে আসা একজনের পায়ে ও হাতে এবং আরেকজনের মাথায় গুলি লেগেছে। তবে তারা এখন কিছুটা আশঙ্কামুক্ত।

অন্যদিকে, এদিন সন্ধ্যায় লালমাই উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব ইউসুফ আলী মীর পিন্টুসহ নেতাকর্মীরা স্থানীয় একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন। তারা বলেন, আমরা পুলিশকে লিখিতভাবে জানিয়ে দুইটি ইউনিয়নে কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করি। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের স্থানীয় কয়েকজন নেতাকর্মীর বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় এবং আমাদের নেতাকর্মীদের গুলি করে। এতে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন আহত হয়েছেন। তারা বর্তমানে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান জানান, বিএনপির লোকজন আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করেছে। আমাদের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল না, কারা এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে তিনি জানেন না।

এ বিষয়ে লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হানিফ সরকার বলেন, বেলঘর উত্তর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লোকজনের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে বিএনপির মঞ্চ ও চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করা হয়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতার বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, তবে লুটপাট হয়নি। এ ঘটনায় এখনও কেউ অভিযোগ করেনি।