বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শুক্রবার র্যালি বের করলে দেশের কয়েকটি স্থানে দলটির নেতাকর্মীদের বাধা দেয় পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় গাইবান্ধা, নেত্রকোনার কলমাকান্দা, মাগুরার মহম্মদপুর ও পটুয়াখালীর দশমিনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট, টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও শটগানের গুলি ছোড়ে। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় কয়েকটি গাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে পুলিশসহ বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বগুড়ার নন্দীগ্রামে আওয়ামী লীগের বাধা ও ভাঙচুরে বিএনপির কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। একই দিন ও বৃহস্পতিবার রাতে গাইবান্ধা, নেত্রকোনা ও বরগুনার আমতলীতে বিএনপির ২১ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
গাইবান্ধা : জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী টিটুল জানান, বিএনপির অফিস থেকে বিকালে একটি র্যালি বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। র্যালিটি গাইবান্ধা পৌর এলাকায় এলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। পরে ধাওয়া-পালটাধাওয়া ও সংঘর্ষে রূপ নেয়। পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও শটগানের গুলি ছোড়ে। এ সময় গাইবান্ধা জেলা মহিলা দলের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমীন শোভা, সাধারণ সম্পাদক মৌসুমি বেগম তমা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতানা খন্দকার মনি, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জাকারিয়া খন্দকার জীম, সিয়ামসহ অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ বিএনপির অফিস থেকে ৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে।
গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা বলেন, অনুমতি ছাড়াই বিএনপি শহরে মিছিল বের করে। পুলিশ বাধা দিলে এ ঘটনা ঘটে। তবে কত রাউন্ড টিয়ার শেল ও শটগানের গুলি ছোড়া হয়েছে তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।
কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) : পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা র্যালি নিয়ে কলমাকান্দা সদরের বিএনপি কার্যালয়ে আসছিলেন। এতে বাধা দেয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের নেতাকর্মীদের মাঝে সংঘর্ষ বেধে যায়। পরে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতরা ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে পালটাপালটি অভিযোগ করেছেন দুপক্ষের নেতারা।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন-ইউপি সদস্য ও কলমাকান্দা সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক, যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, মাসুম মিয়া, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক অমিত সরকার, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বাবুল মিয়া, দেলোয়ার হোসেন, যুবশ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক মিয়া, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক গোলাম রসুল, সদস্য সচিব শেখ রবিন, সদস্য মাজহারুল ইসলাম হৃদয়, সোহানুর রহমান, শ্রমিক দল নেতা রুবেল মিয়া, যুবদল নেতা ভুট্টু মিয়া, স্বপন মিয়া, তাইমুল হক, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা খোকন মিয়া। এসময় পুলিশের এএসআই মামুন ইবনে হেলাল, এএসআই শরিফ উদ্দিন, এএসআই আসাদুজ্জামান ও পুলিশ সদস্য সাজাদ হোসেন আহত হয়েছেন।
কলমাকান্দা থানার ওসি আবুল কালাম বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র ও লাটিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়।
মহম্মদপুর (মাগুরা) : স্থানীয়রা জানান, বিকালে মহম্মদপুর বাজারে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে আসতে শুরু করে। এসময় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরে পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পালটাধাওয়া হয়। পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এসময় পুলিশের গাড়ি, একটি মোটরসাইকেল, তিনটি দোকানপাট ভাঙচুর করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষে ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করে বিএনপি।
দশমিনা (পটুয়াখালী) : দুপুরে দশমিনা সদর ইউনিয়নের নলখোলা বন্দরের ঢিলাসংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড থেকে মিছিল বের করে বিএনপি। এতে শত শত নেতাকর্মী অংশ নেন। মিছিলটি পূজাখোলায় পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বেধে যায়। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন বলেন, কর্মসূচির জন্য পুলিশের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। পুলিশ শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালায়। এতে আমাদের প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। দশমিনা থানার ওসি আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, বিএনপি নেতারা সড়কে যানজট সৃষ্টি করায় পুলিশ তাদের চলে যেতে বলে। কিন্তু তারা না গিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ায়। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের মোটরসাইকেল ও একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে।
বগুড়া : নন্দীগ্রামে বিকালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাধায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পন্ড হয়ে যায়। এ সময় চেয়ার ভাঙচুর ও হামলায় বিএনপির পাঁচ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দাবি, বিএনপির সন্ত্রাসীরা তাদের শান্তি সমাবেশে ককটেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে। তবে নন্দীগ্রাম থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, কোনো ককটেল নিক্ষেপ ও গুলির ঘটনা ঘটেনি। দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে।
নেত্রকোনা : বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের অন্তত ১৩ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে রয়েছেন-দুর্গাপুর উপজেলা যুবদলের সদস্য বাবুল আহমেদ, আটপাড়ার সুনই ইউনিয়নের ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম মোস্তফা, দুওজ ইউনিয়নের যুবদলকর্মী কাঞ্চন মিয়া, কলমাকান্দার কৈলাটি ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জুয়েল আকন্দ, সদস্য মো. জয়নাল আবেদিন, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য লাবলু মিয়া, বারহাট্টায় যুবদলকর্মী হিরা মিয়া, কেন্দুয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার ও ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান।
আমতলী (বরগুনা) : তালতলী উপজেলায় বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি থেকে বিএনপির ৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরা হলেন-উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন, সোনাকাটা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গাজী মনির হোসেন ও যুবদল কর্মী রাজা হাওলাদার। তালতলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল হক বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পণ্ড করতেই তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম খান বলেন, পুরোনো মামলায় তাদের গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শোভাযাত্রার সময় ভূঞাপুর থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আলমগীর গ্র“পের হামলায় সদস্য সচিবসহ ৩ নেতা আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন-ভূঞাপুর থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব কাজী শাহিন, গোবিন্দাসী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান জুয়েল ও অর্জুনা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ফিরোজ। আহত কাজী শাহিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ভূঞাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।