আন্তর্জাতিক

গাজা-ইসরাইলের সঙ্ঘাতের সর্বশেষ অবস্থা

টানা পাঁচ দিন ধরে ইসরাইলি বিমান হামলা এবং অবরোধের মধ্যে থাকার পর গাজার মানবিক পরিস্থিতি ক্রমে মরিয়া হয়ে উঠছে।

উপত্যকার একমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালগুলোতে হাজার হাজার আহত রোগীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষের ওষুধ শেষ হয়ে আসছে।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে¸ গত রাতে গাজায় ইসরাইলি বোমা হামলায় কমপক্ষে ৫১ জন নিহত হয়েছে। ইসরাইলে হামাসের হামলার পর দেশটিতে এখনো পর্যন্ত ১২ শ’ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আর এর জবাবে ইসরাইলি বিমান হামলায় গাজায় এক হাজার দুই শ’ মানুষ নিহত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সাথে আলোচনা শুরু করেছে। জাতিসঙ্ঘ এবং মিসর গাজায় ত্রাণ সরবরাহ করছে এবং বাসিন্দাদের নিরাপদে গাজা উপত্যকা ছেড়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে।

এদিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দাবি করেছিলেন যে হামাসের সদস্যরা শিশুদের শিরোচ্ছেদ করছে এমন ছবি দেখেছেন- এ বিষয়ে মন্তব্য করেছে হোয়াইট হাউজ। তারা জানিয়েছে, বাইডেন আসলে এ ধরনের কোনো ছবি দেখেননি।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বৃহস্পতিবার ইসরাইলে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে তিনি ইসরাইলের প্রতি আমেরিকার সমর্থন আবারো তুলে ধরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ইসরাইল গাজা সীমান্তে সেনা জড়ো করেছে। এদের মধ্যে নিয়মিত সৈন্যের পাশাপাশি তিন লাখের মতো সংরক্ষিত সৈন্য রয়েছে। তবে গাজার ভেতরে তারা কখন অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।

গতকাল জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে গাজার একমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যার কারণে গাজার লাখো বাসিন্দা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছেন। গাজার বেশিরভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় ইসরাইল থেকে। তবে হামাসের হামলার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। তবে গাজার বাসিন্দারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা তাদের কাছে নতুন কিছু নয়। এক নারী বলেন, ‘আমার যতদূর মনে পড়ে বহু বছর যাবত আমরা বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার সমস্যায় রয়েছি ‘

হামাসের হামলার পর বিদ্যুৎ ছাড়াও খাদ্য এবং পানিসহ দৈনন্দিন বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, দ্রুত এবং নিরবচ্ছিন্ন মানবিক প্রবেশাধিকার দরকার। গাজা উপত্যকায় ত্রাণ এবং ওষুধ সরবরাহ করার জন্য নিরাপদ করিডোর দেয়ার বিষয়ে ইসরাইলের ওপর চাপ বাড়ছে। একইসাথে ফিলিস্তিনিদের নিরাপদে গাজা ত্যাগের করিডোর দেয়ারও দাবি উঠেছে।

জাতিসঙ্ঘ বলেছে, গাজায় কমপক্ষে তিন লাখ ৩৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

যুদ্ধকালীন সরকার গঠন
বিরোধী দলকে সাথে নিয়ে যুদ্ধকালীন সরকার গঠন করেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

রাজনৈতিক বৈরিতা সরিয়ে রেখে বিরোধী নেতা বেনি গাৎজকে সাথে নিয়ে বুধবার তিনি যুদ্ধকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন।

‘প্রতিটি হামাস সদস্য এখন একজন মৃত মানুষ,’ বলেছেন নেতানিয়াহু।

গাৎজ বলেছেন, ‘এখন যুদ্ধের সময়’ এবং ‘নতুন সরকার পৃথিবী থেকে হামাস নামের সবকিছু সরিয়ে দিতে প্রস্তুত।’

তিনি বলেছেন, সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে বিরোধী দলগুলো পুরোপুরি সমর্থন দিয়ে যাবে।

ইরানি প্রেসিডেন্ট ও সৌদি যুবরাজের বিরল টেলিফোন আলাপ
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বুধবার টেলিফোনে ইসরাইল-গাজা সঙ্ঘাত নিয়ে আলোচনা করেছেন।

তেহরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এই খবর দিয়েছে।

দুই বছর আগে চীনের মধ্যস্থতায় দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া শুরুর পর এই প্রথম এই ধরনের টেলিফোন আলাপের কথা প্রকাশ্যে জানা গেল।

ইরানের গণমাধ্যম বলেছেন, প্রেসিডেন্ট রাইসি ও যুবরাজ মোহাম্মদ ‘ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ বন্ধের প্রয়োজনীয়তা’ নিয়ে আলোচনা করেছেন।

সৌদি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ বলেছে, সৌদি যুবরাজ নিশ্চিত করেছেন যে ’বর্তমান উত্তেজনা নিরসন করতে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সব পক্ষের সাথে সব রকমের যোগাযোগ করছে সৌদি আরব।’

ইসরাইলে ব্লিঙ্কেনের আলোচনায় মার্কিন বন্দীদের মুক্তির এজেন্ডা
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বৃহস্পতিবার ইসরাইলে যাচ্ছেন। সেখানে তিনি বর্তমান সঙ্ঘাতের অবসানের বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। ব্লিঙ্কেন কোনো যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাননি।

তার পরিষ্কার বার্তা হলো, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সাথে রয়েছে, সেটা আজ, আগামীকাল এবং ভবিষ্যতেও।

হামাসের বিরুদ্ধে জোরদার এবং দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করে যাবে। তবে সেইসাথে যুদ্ধে নিয়মকানুন রক্ষা এবং বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ইসরাইলকে তাগিদ দেবে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের যে নাগরিকদের হামাস বন্দী করে রেখেছে, তাদরে মুক্তির বিষয়টিও ব্লিঙ্কেনের আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাবে। বেশ কয়েকজন মার্কিন নাগরিক হামাসের হাতে বন্দী রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে কিভাবে তাদের উদ্ধার করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

সূত্র : বিবিসি