রাজনীতি

সরকার সহিংসতা ও সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতিকে উস্কে দিচ্ছে : রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার আবারো ক্ষমতায় থাকার জন্য সহিংসতা ও সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতিকে উস্কে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, জাতিসঙ্ঘ, গণতান্ত্রিক দেশগুলো ও মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীরা সেগুলোকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে।

শনিবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রায়শই বলেন জনগণ নাকি তাদের সাথে আছে। তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিজে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিচ্ছেন না কেন? জনগণ সাথে থাকলে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে ভয় পাচ্ছেন কেন? কেন নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপিসহ বিরোধী দলের কর্মসূচিতে নৃশংস হামলা চালিয়ে শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে কারান্তরীণ করেছেন? কেন দেশব্যাপী ব্যাপক ধর-পাকড় করছেন বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের। নেতাকর্মীদের ধরতে গিয়ে তাদের বাসায় না পেয়ে তার বাবা বা ভাইকে আটক করছেন?’

‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় ক্যাডাররা রক্তাক্ত আক্রমণ চালিয়ে বিরোধী নেতাকর্মীদের হত্যা ও বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে জখম কেন করছেন? এতটাই বিধ্বংসী হয়ে উঠেছেন যে দেশব্যাপী ধর-পাকড় করে ভীতির পরিবেশ তৈরি করেছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘উদ্ভট গায়েবি মামলার নতুন নতুন মডেল আমরা দেখতে পাচ্ছি। ঢাকায় গ্রেফতার যুবদল নেতা মামুনকে বরিশালে ককটেল নিক্ষেপের মামলায় আসামি করা হয়েছে। জেলে থেকে নাকি ট্রাকে পেট্রোল নিক্ষেপ করেছেন বিএনপি নেতা কাঁকন। এ সমস্ত হাস্যকর তামাশার মামলা দিয়ে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের জুলুম আর হয়রানির ভয়ঙ্কর আবর্তের মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদের বিষাক্ত নখরের আচড়ে গণতন্ত্রকামী মানুষকে ছিন্নভিন্ন করতে চাচ্ছে। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য সহিংসতা ও সংঘাতময় পরিস্থিতিকে উস্কে দিচ্ছে। জাতিসঙ্ঘ, গণতান্ত্রিক দেশগুলো ও মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীরা সেগুলোকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে।’

তিনি বলেন, ‘২৮ অক্টোবরের ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে যেগুলো প্রকাশ পেয়েছে, তার প্রায় প্রতিটাতেই দেখা যায়, লাঠিসোটা নিয়ে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা পুলিশের সাথে হাঁটছে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী আগ্রাসী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অস্ত্র হিসেবে কাজ করবে।’

‘বিএনপি ডাকা হরতাল-অবরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী ক্যাডাররা একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করেছে,’ বলেন তিনি।

রিজভী বলেন, ‘বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ কারাগারে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ কারাগারে। জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সাথে প্রচণ্ড অসদাচরণ করা হচ্ছে। তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। উচ্চমাত্রার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগে তিনি আক্রান্ত। গ্রেফতারের পর তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে, সেখানে তাকে কোনো ওষুধ পর্যন্ত দেয়া হয়নি। এক মনুষ্যত্বহীন অবিচারে তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে কষ্ট দেয়া হচ্ছে।’

এ সময় সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কর্তৃক হামলা, মামলা, গ্রেফতার ও নিহতের বিবরণ তুলে ধরে রিজভী বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে মহাসমাবেশের ৩/৪ দিন আগে থেকে এবং মহাসমাবেশের পর বিএনপির শান্তিপূর্ণ হরতাল ও অবরোধকে কেন্দ্র করে মামলা হয়েছে ১১৩টির বেশি, গ্রেফতার ৫ হাজার ২৩ জনের বেশি বিএনপি নেতাকর্মী, আহত ৩ হাজার ৪৮৭ জনের অধিক নেতাকর্মী এবং নিহত হয়েছে ১০ জন (সাংবাদিক একজন)।

সবশেষ, মুন্সিগঞ্জ জেলাধীন শ্রীনগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য ও হাসারা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক বিপ্লব হাসান বিপুল গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড এবং টিয়ারশেলের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল (৩ নভেম্বর) ইন্তেকাল করেছেন।