বিএনপি নিয়ে দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে নিজের অবস্থান জানালেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ‘আমি যা বলেছি কোনো ভুল বলিনি। বক্তব্য একদম ঠিক আছে। অনেক কথার মধ্যে বিষয়টি এসেছে।’
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে সহিংসতা আটকাতে পরিকল্পিতভাবেই বিএনপি নেতাদের কারাগার রাখা হয়েছিল। তবে নির্বাচনে এলে ছাড় দেয়ার প্রস্তাবেও রাজি হয়নি বিএনপি নেতা-কর্মীরা।’
আব্দুর রাজ্জাকের এ বক্তব্য ‘সঠিক নয়’দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এ বক্তব্য আওয়ামী লীগ কিংবা সরকারের নয়, এটি তার নিজস্ব বক্তব্য।
তিনি বলেন, ‘আমি এটাই বলতে চেয়েছি আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল। আওয়ামী লীগ সব সময় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চেতনার আলোকে পরিচালিত হয়। আমরা সব সময় চেয়েছি এই নির্বাচনে সব দল অংশ নিক। বহুবার আমি বলেছি বিএনপি অবশ্যই একটি বড় রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনে আমরা আনতে চাই কিন্তু সংবিধানের বাইরে আমাদের যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমার কথার সারমর্ম ছিল, প্রধানমন্ত্রী ও আমরা সব সময় চেয়েছি, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিক। সেটা বলতে গিয়ে বলেছি আমরা কতদূর পর্যন্ত, নির্বাচন কমিশনার কথা বলেছি, ইয়ের কথা বলেছি। ওই উইল লেফট নো স্টোন আনট্র্যাক, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। কিন্তু বিএনপি আসবে না।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ চেয়েছে আগামী নির্বাচনের সব রাজনৈতিক দল অংশ নিক। বিএনপি একটি বড় দল এটা আমরা সব সময় বলি। কিন্তু বিএনপি সব সময় নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার নানা রকম ফন্দি করেছে। আমরা কী দেখেছি, ১৩ সালে, ১৪ সালে ও ১৫ সালে?’
‘আমার বক্তব্য হলো এই যে আওয়ামী লীগ আন্তরিকভাবে চেয়েছে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিক। এই কথাটা বলতে গিয়ে আমি সেদিন কিছু কথাবার্তা বলেছি।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এটাও বলেছি, বিএনপি চায় নির্বাচন বানচাল হোক। তারেক জিয়ার নামে মামলা রয়েছে, তার শাস্তি হয়েছে, সে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তার মা (খালেদা জিয়া) অসুস্থ, তারও শাস্তি হয়েছে। তারা নির্বাচনে আসতে চায় না।’
তিনি আরো বলেন, আমাদের আওয়ামী লীগের বক্তব্য হলো সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনোক্রমে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর কোনো দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। কাজেই আওয়ামী লীগের তো কোনো বিকল্প নেই, এই কথা আমি বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘এই পদ্ধতির মধ্যে থেকে বিএনপি বলতে পারতো কীভাবে নির্বাচনকে সবার কাছে সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা যায়? সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থনও আমরা নিতে পারতাম, আরো বেশি পর্যবেক্ষক আসত বিদেশ থেকে। এখন ওসিদের বদলি করছে, এভাবে এসপিদের ট্রান্সফার করা যেত, ডিসিদের করা যেত। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য যা যা করা দরকার সংবিধান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও এই সরকারকে রেখে সেটা আওয়ামী লীগ সবসময় করতে চেয়েছে। কিন্তু বিএনপি সেটা বিশ্বাস করে না। তারা গেছে আন্দোলনে।’
‘কীভাবে তারা রেললাইন কেটেছে! দেশে কি কোনো মুক্তিযুদ্ধ চলছে? দেশে কি যুদ্ধাবস্থা? এগুলো তো যুদ্ধের সময় করে। এগুলো বন্ধ করতে হলে মানুষকে তো গ্রেপ্তার করতে হবে। বিএনপি নেতাদের হুকুম ছাড়া কোনো কর্মী কি বাসে আগুন দেবে? তার জেল জুলুমের ভয় আছে না। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের দায়িত্ব হলো মানুষের জান মালের নিরাপত্তা দেয়া। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’
বিএনপি নির্বাচনে এলে সহিংসতা ও আগুন সন্ত্রাস করার প্রয়োজন হতো না জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নির্বাচন কমিশন বারবার বলেছে বিএনপি নির্বাচনে এলে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া হবে। ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কি জেলে রেখে নির্বাচন হবে?
তিনি আরো বলেন, সেটা একটা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে জামিনের ব্যবস্থা করা হতো। একটা ফর্মালিটিজ করে আইনের মাধ্যমে তাদের ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হতো। নির্বাচন কমিশনে তো আইনের লোক অনেক আছে।’
মন্ত্রী বলেন, বিএনপি যদি রাজি হয় নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। এই কথাটিই আমি বলেছি।
তিনি আরো বলেন, ‘একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আলাপ-আলোচনা করে অনেক কিছুই করা যায়। খুনের আসামিরও তো জামিন হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর ফাঁসি হবে, কোথায় গেল মামলা, একদিনেই তো উনি জামিন পেয়েছেন। নিশ্চয়ই প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলে ফরমালিটিস করেছে।’
বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হবে না। কিছু ভোটার কম হলেও উল্লেখযোগ্য ভোটার ভোট দিতে আসবে বলেও মনে করেন আব্দুর রাজ্জাক।
আপনার দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, আপনার বক্তব্য ব্যক্তিগত এ বিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এটাতো দলের বক্তব্য না, অবশ্যই আমি ব্যক্তিগতভাবে দিয়েছি যেটা অনুভব করি। আমার দলও চায় সব দল নির্বাচন অংশ নিক।’
নির্বাচনে এলে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জামিন আর নির্বাচনে না এলে হবে না এটা কি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সাথে সাংঘর্ষিক কি না জানতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে অর্থনীতি রাজনীতির সাথে জড়িত। এটা আপনাকে মানতে হবে। শুধু আইনের কথা বললেই হবে বাস্তবতাকে…। আমি এক হাজার উদাহরণ দেব।’