বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্য ফ্যাসিস্ট সরকার কর্তৃক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আজ্ঞাবাহ করার এক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী। তার বক্তব্যে প্রতিভাত হয়েছে যে জনগণের লুণ্ঠিত ভোটাধিকার, গণতন্ত্র, মানবাধিকার পুনঃ প্রতিষ্ঠার যে আপসহীন আন্দোলন বিএনপি চালিয়ে যাচ্ছে, সেই আন্দোলনকে স্তব্দ করার জন্য বর্তমান অনির্বাচিত সরকার কিভাবে কাজ করছে।’
তিনি জানান, এ সরকার ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপির ২১ হাজার ৮৩৫ জন নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে কারাগারে অন্তরীণ করেছে। গত ১৪ সপ্তাহে মোট ৭৯টি মামলায় সর্বমোট ১২৪৯ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এক সংবাদ সম্মেলন ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। এতে বলা হয়, একটি বেসরকার টেলিভিশন চ্যানেলে প্রদত্ত আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের একটি বক্তব্যের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপিকে ভোটে আনতে সব চেষ্টাই করেছে আওয়ামী লীগ। এমনকি এক রাতে সব নেতাকে জেল থেকে মুক্তির প্রস্তাবেও বিএনপি রাজি হয়নি।’ তিনি আরো বলেন, ‘বারবার নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে, বিএনপি নির্বাচনে এলে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া হবে। শুধু পিছিয়ে দেয়া নয়, বলা হয়েছে, সবাইকে জেল থেকে ছেড়ে দেয়া হবে।’
আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিএনপির ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার না করলে বাংলাদেশে আজকে হরতালের দিন গাড়ি চলতো না। এছাড়া আমাদের অন্য কোনো গত্যন্তর ছিল না। বিকল্পও ছিল না। যেটা করেছি আমরা চিন্তাভাবনা করেই করেছি। তাদের জেলে না রাখলে দেশ অচল হয়ে যেত।’
‘আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতার এই বক্তব্যই প্রমাণ করে যে, রাষ্ট্রের সমস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বর্তমান অনির্বাচিত শেখ হাসিনার সরকার কিভাবে করায়ত্ত করেছে,’ বলেন কায়সার কামাল।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ‘গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণকালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মহাসমাবেশ করে বিএনপি, যা আসলে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু মহাসমাবেশ চলাকালে সরকারি দল, তাদের পেটোয়া বাহিনী এবং দলদাসে পরিণত হওয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিনা উস্কানিতে মুহুর্মুহু বিকট শব্দের সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার গ্যাস এবং গুলিবর্ষণের মাধ্যমে বিএনপির জনসভা শুধু পণ্ডই করেনি, যুবদল নেতা, একজন সাংবাদিক এবং একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা, অগণিত বিএনপি নেতাকর্মী এবং জনগণকে আহত করে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করে বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার এবং নির্যাতন করার এক প্রহসনের নাটক মঞ্চস্থ করেছিল।
কায়সার কামাল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাকের এই অকপট বক্তব্য আসলে ফ্যাসিস্ট সরকার কর্তৃক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আজ্ঞাবাহ করার এক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী।’
তিনি বলেন, ‘ড. আব্দুর রাজ্জাকের এই বক্তব্য বাংলাদেশের বিচার বিভাগের অস্তিত্বকে শুধু অস্বীকারই করেনি, জাতিকে বার্তা দিয়েছে যে, বিচার বিভাগ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন সব কিছুই ফ্যাসিস্ট সরকারের ইচ্ছার কাছে মাথানত করেছে। দেশের নির্বাহী বিভাগের প্রধান ব্যক্তি শেখ হাসিনার ইচ্ছা বা অনিচ্ছার ওপরেই সবকিছু নির্ভর করে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল ছাড়া, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার যে সিদ্ধান্ত বিএনপি নিয়েছে সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্য বিএনপি অন্যান্য গণতান্ত্রিক সমমনা, রাজনৈতিক দল, জোট সর্বোপরি জনগণকে সাথে নিয়ে বর্তমান ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রাখবে।’
কায়সার কামাল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতাদের এহেন বক্তব্যের মধ্যদিয়ে এটা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে, অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা যেকোনো শর্তের মাধ্যমে জেলখানা থেকে মুক্তি এবং যেকোনো ধরনের সুবিধাবাদী মানসিকতার কাছে স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বিএনপি অতীতেও আত্মসমর্পণ করেনি, বর্তমানেও করছে না এবং ভবিষ্যতেও করবে না।’
‘মহান বিজয় দিবসের এই মাসে আমরা পুনরায় অঙ্গিকার করতে চাই, বিএনপি এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সমমনা রাজনৈতিক দল, জোট এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আইনের শাসন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে যে আন্দোলন চলমান, যতই জেল-জুলুম-নির্যাতন আসুক না কেন সেই আন্দোলনের বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত এদেশের মুক্তিকামী ও গণতন্ত্রপন্থী জনগণ আন্দোলন অব্যাহত রাখবে,’ বলেন কায়সার কামাল।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল, আইনজীবী আবেদ রাজা, ইউএলএফের সমন্বয়ক সৈয়দ মামুন মাহবুব, মো: আক্তারুজ্জামান, মো: কামাল হোসেন, মো: মাহবুবুর রহমান খান প্রমুখ।