মানবাধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষায় বাংলাদেশকে ডিউ ডিলিজেন্স বা নিয়মকানুন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। নিয়ম না মানলে নিষেধাজ্ঞা ও জরিমানার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের জন্য ব্র্যান্ডগুলোকে বাধ্য করা হবে। নিয়ম না মানলে নিষেধাজ্ঞা ও জরিমানা দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) আয়োজিত ‘ডিউ ডেলিজেন্স ল’স শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। আইবিএফবি সভাপতি হুমায়ুন রশীদের সভাপতিত্বে গোলটেবিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডেপুটি হেড অব ইইউ মিশন বার্নড স্প্যানিয়ার।
আলোচনায় অংশ নেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, আইবিএফবির সহসভাপতি এম এস সিদ্দিকী, সংগঠনের উপদেষ্টা মুহাম্মদ আবদুল মজিদ। ঢাকায় মার্কিন দুতাবাসের কমার্সিয়াল কাউন্সেলর জন ফেসহ আরও কয়েকজন কুটনীতিক উপস্থিত ছিলেন।
চার্লস হোয়াইটলি আরো বলেন, যে ডিউ ডিলিজেন্স আইন করা হয়েছে, তা শুধু ক্রেতা–বিক্রেতার বিষয় না; সরবরাহ শৃঙ্খলে যুক্ত সবার পালনের জন্যই তা করা হয়েছে। এসব নিয়মকানুনের মধ্যে শিশুশ্রম, বাধ্যতামূলক শ্রম, দাসত্ব (স্লেভারি), বন ধ্বংস, পরিবেশদূষণ, ইকোসিস্টেমের ক্ষতি করা ও মানবাধিকারের মতো বিষয় রয়েছে। সুতরাং এসব শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নের একার স্বার্থ নয়, এর সঙ্গে বৈশ্বিক স্বার্থ যুক্ত।
এসময় বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে টেকসই ও দায়িত্বশীল চর্চা পালন করা হচ্ছে। তবে মনে রাখতে হবে, এটি একক কোনো কাজ নয়। এ প্রক্রিয়া সফল করতে হলে ক্রেতা–বিক্রেতা উভয়ের সমর্থন প্রয়োজন।
ডেপুটি হেড অব ইইউ মিশন বার্নড স্প্যানিয়ার বলেন, ইইউ কিছু আবশ্যক পালনীয় আইন বা ডিউ ডিলিজেন্স বাস্তবায়ন করছে। ডিউ ডিলিজেন্স বাধ্যবাধকতা দুইভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথমত. মানবাধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হলে ভুক্তভোগী যে কেউ নির্দিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে ইউরোপীয় আদালতে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারবেন। দ্বিতীয়ত. ইইউর তদারককারী কর্তৃপক্ষগুলো নিজেরাই পর্যবেক্ষণ করবে যে, সরবরাহ শৃঙ্খলে কেউ নিয়ম ভাঙছে কিনা। যথাযথভাবে নিয়ম না মানলে ইইউ কর্তৃপক্ষ যে কোনো নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে, যার পরিমাণ ওই কোম্পানির বৈশ্বিক টার্নওভারের ৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি বলেন, ক্রেতা দেশগুলোর বিভিন্ন আইনের জন্য কয়েক ধরনের অডিট পদ্ধতি মেনে চলতে হয় উৎপাদকদের। এতে বাণিজ্যের সময় ও খরচ অনেক বেড়ে যায়। অপ্রয়োজনীয় এসব অডিট পদ্ধতিকে ইউনিফাইড করা প্রয়োজন।
বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, সব ধরনের শর্ত মানলেও পণ্যের ন্যায্য দাম পাওয়া যায় না। সুতরাং সব কমপ্লায়েন্স মানার শর্ত দিলে ভারী বোঝা বহনের শক্তিও দিতে হবে।