কারা মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজন) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক বলেছেন, কারাগারে কনডেম সেল বলতে কিছু নেই। যারা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তাদের কারাবিধি অনুযায়ী পৃথক রাখা হয়। তার মানে এই নয় যে, বাইরে থেকে যেমনটা সবাই মনে করে, কনডেম সেল মানে ভুতুড়ে জায়গা বা ভিন্নরকম কিছু। সংশ্লিষ্ট যারাই কনডেম সেল পরিদর্শনে যান তারাই বলেন, বাইরে থেকে কি ভাবতাম আর কি দেখছি। কনডেম সেলেও বিধি অনুযায়ী বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। শুধু কনডেম সেল নয়, উন্নয়নের সোপানে এগিয়ে চলা বাংলাদেশে- কারাগার কোনো অংশে পিছিয়ে নেই।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে কারা অধিদপ্তরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) নবনির্বাচিত কমিটির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় তিনি এ কথা বলেন। এসময় ক্র্যাব সভাপতি কামরুজ্জামান খান, সহ-সভাপতি শাহীন আবুদল বারী, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক হরলাল রায় সাগর, সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম রাজীসহ নবনির্বাচিত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সৌজন্য সাক্ষাত শেষে আইজি প্রিজন ফুলের তোড়া দিয়ে ক্র্যাবের কমিটিকে শুভেচ্ছা জানান। ক্র্যাবের পক্ষ থেকেও ফুলের তোড়া দিয়ে আইজি প্রিজনকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এসময় সংবাদ কর্মীদের স্বল্প সময়ে তথ্য দেয়া ও ক্র্যাবের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
আইজি প্রিজন বলেন, কারাগার নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। যেমন আয়নাবাজি সিনেমার মতো একজনের সাজা অন্যজন খেটে দিতে পারে। বাস্তবে এসব ঘটনা ঘটানো এখন আর সম্ভব নয়। এনটিএমসির সঙ্গে সমন্বয় করে একটি ডেটাবেইজ তৈরি করা হয়েছে। একজন বন্দি যখন জেলখানায় প্রবেশ করে তখন তার ফিঙ্গার প্রিণ্ট, আইরিস ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে এন্ট্রি করা হয়। সুতরাং কেউ জালিয়াতির চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ে যাবে। শুধু এটিই নয়, কারাগারকে সত্যিকার অর্থে সংশোধনাগার করতে ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ’ স্লোগানকে সামনে রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, কারাগারের অনিয়ম বন্ধ করতে ৩৮টি কারাগারকে সিসি ক্যামেরার আওতায় অধিদপ্তর থেকে নজরদারি করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশের ৬৮ কারাগারকেই সিসি ক্যামেরার আওতায় কেন্দ্রীয়ভাবে নজরদারি করা হবে। কারাবন্দীদের সেবা বাড়ানোর জন্য ৫ হাজার জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। রাজশাহীতে নির্মাণ হয়েছে কারা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি ও বিশেষায়িত কারা হাসপাতাল কেরানীগঞ্জে বানানো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিটি কারাগারে দুটি বড় বড় ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড রয়েছে। এতে করে বন্দি ও দর্শনার্থীরা দেখতে পারছেন- কার জামিন হলো এবং বিভিন্ন নির্দেশনা। এই ডিসপ্লেকে জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমও বলা যেতে পারে। ডান্ডাবেড়ি বিতর্ক নিয়ে কারা প্রধান বলেন, ডান্ডাবেড়ি পড়ানো কারা কর্তৃপক্ষের ইচ্ছাতে হয় না। পুলিশের চাহিদা অনুযায়ী হয়ে থাকে।
আনিসুল হক বলেন, কয়েদী বন্দি থেকে হাজতি বন্দি কয়েকগুণ বেশি। বর্তমানে কয়েদি বন্দি প্রায় বিশ হাজারের মত থাকে আর হাজতি থাকে ৫৫ থেকে ৬০ হাজারের মত। বন্দিদের খাদ্য তালিকায় বেশ পরিবর্তন আনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে ৩৮টি কারাগারে ৩৯টি বিষয়ে বন্দিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে হস্ত শিল্প থেকে শুরু করে গার্মেন্টেসের কাজও শেখানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার বন্দিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ফলশ্রুতিকে এসব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বন্দি যখন স্বাভাবিক জীবনে ফেরত যায়। তখন এই প্রশিক্ষণ থেকে কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। এছাড়াও ঝুঁকি ও সময় বিবেচনায় দেশের ৫টা কারাগারে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে ভার্চুয়াল আদালতের সংখ্যাও বাড়বে।
