দেশবার্তা

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা অব্যাহত

রাখাইনে চলমান সংঘর্ষে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তারা মনে করছে, প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়স্থল বাংলাদেশ। এছাড়া তাদের অধিকাংশ আত্নীয়-স্বজন বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ ও নোয়াখালীর ভাসানচরে অবস্থান করছেন। এরই মধ্যে প্রায় দুই শতাধিক রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছে ১১ বিজিবি ও ৩৪ বিজিবি।

উখিয়া বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা ওসমান জানান, আমাদের অনেক আত্নীয় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাস করছেন। চলমান সঙ্ঘাতের ফলে তাদের ভাগ্যে কী আছে তা নিয়ে আমরা দুঃচিন্তায় আছি। এপারে নাফ নদীতে বিজিবির কড়া সতর্কাবস্থায় থাকায় অনেকেই আসতে চেয়েও আসতে পারছেন না। আবার ওপারে জান্তা সরকারের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অনেক আত্নীয়-স্বজন বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ওখানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় দখল নিচ্ছে আরাকান আর্মি। এমন পরিস্থিতিতে কখন কী ঘটে তা বলা মুশকিল।

তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট আমরা সব কিছু হারিয়ে প্রাণ বাঁচাতে এই দেশে আশ্রয় গ্রহণ করি। সেই সময় এই পারের মানুষেরা আমাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাসহ সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন। এখন নানাবিধ সমস্যার কারণে এখানকার মানুষ ও সরকার আমাদের ওপারে থাকা রোহিঙ্গাদের প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। এখানকার মানুষ মনে করে, অনুপ্রবেশ ঘটলে দেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে।

ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় আমার ইউনিয়নে দু’জন প্রাণ হারিয়েছেন। অনেকেই আহত হয়েছে। ঘরছাড়া হয়েছে। আতঙ্কে বহুদিন তারা বাড়িতে থাকতে পারেননি। এখান পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত হওয়ায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছেন সীমান্তবাসী।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আবসার ইমন বলেন, রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের চেষ্টায় আতঙ্কিত বাংলাদেশীরা। বর্তমানে রাখাইনে সঙ্ঘাত চলছে। তাই রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে এখানে আসার চেষ্টা করছে। তারা আবারো এদেশে অনুপ্রবেশ করলে নানা সমস্যায় পড়তে হবে আমাদের।
টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপ এলাকার জেলে আব্দুস শুক্কুর বলেন, ওপারে ছোট ছোট নৌকা নিয়ে এপারে আসতে অপেক্ষা করছে অনেক রোহিঙ্গা। তারা সুযোগ বুঝে এপারে চলে আসতে পারে। এদের সহায়তায় রয়েছে এপারের কিছু দালাল চক্র।

২০ দিন ৫ প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ
সীমান্তে চলমান সঙ্ঘাতের জের ধরে ঘুমধুম সীমান্তবর্তী পাঁচটি সরকারী প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী রয়েছে ১১ শ’ জন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিশাখার এক প্রজ্ঞাপনে গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এ সব স্কুল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে গোলাগুলি ও মর্টারশেলের আওয়াজে সীমান্ত জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে স্কুলগুলো বন্ধ করা হয়। স্কুলগুলো হলো দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু পশ্চিমকূল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাইশফাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, শিশুদের শিক্ষার বিষয়টি মাথায় এনে মাঠ পর্যায়ে খোঁজখবর নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় উপজেলা পর্যায়ে স্কুলগুলো খোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ বিষয়ে আজ-কালের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চলমান সংঘর্ষ বেড়েই চলেছে। জাতিগত বিদ্রোহীরা গত বুধবার অস্ত্র ও গোলাবারুদভর্তি সেনাবাহিনীর পাঁচটি ট্রাক নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তানিনথারি অঞ্চলে ঘেরাও দিয়ে বিদ্রোহীরা সেনাবাহিনীর কাছ থেকে এসব ট্রাক ছিনিয়ে নেয়।

মংডু শহরে অবস্থানরত কলিম উল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা কলিম উল্লাহর আত্নীয় সুলতান আহমদ নয়া দিগন্তকে জানান, বহরের ১৭টি গাড়িকে সামরিক টার্গেট করে বিদ্রোহীরা হামলা চালিয়েছিল। এতে সামরিক জান্তার ৮ নম্বর অপারেশনস কমান্ডের প্রায় দুই শ’ সেনা সদস্য ছিল। তাদের ঘাঁটি ছিল দাউইতে। দাউইর প্রায় ১৮ মাইল পূর্বে থাইল্যান্ড সীমান্ত সড়কে কোন গ্রামে গাড়িবহরটির ওপর হামলা হয়। এর ফলে বুধ ও বৃহস্পতিবার সেখানে ধারাবাহিকভাবে আকাশপথে হামলা চালায় সামরিক জান্তা।

এসব তথ্যের বিষয়ে রোহিঙ্গা সুলতান আহমদ বলেন, আমরা রোহিঙ্গারা এখানে বসে সেখানে থাকা আত্নীয়-স্বজনদের দ্বারা এবং রেডিওসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সঠিক খবর পেয়ে থাকি। সেখানে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। সারাদিন ওই এলাকায় বোমা হামলা হয়েছে। বিদ্রোহীরা যে ভিডিও ধারণ করেছে তাতে দেখা যায়, নিয়ন্ত্রণে নেয়া ট্রাকগুলোর চারপাশে পড়ে আছে সেনা সদস্যদের লাশ। সেখানে ১৮টি লাশ পাওয়া গেছে– এমনটি একজনকে বলতে শোনা যায়।

এদিকে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের জান্তা সরকার জোর করে রোহিঙ্গা পুরুষদের সেনাবাহিনীতে ঢোকাচ্ছে বলেও খবর এসেছে। অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হিসেবে যেসব রোহিঙ্গা শিবিরে থাকতেন, তাদেরই সেনাবাহিনীতে নেয়া হচ্ছে। ওই রাজ্যের মানবাধিকারকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, এসব রোহিঙ্গাকে সেনাবাহিনীতে নিয়ে মূলত মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত রাখাইনে সাম্প্রতিক সময়ে কমপক্ষে চার শ’ রোহিঙ্গা পুরুষকে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু শিবির থেকে জোর করে সেনাবাহিনীতে নেয়ার পর মানবাধিকারকর্মীরা এসব তথ্য দিয়েছেন।

তাদের কথা, এসব রোহিঙ্গাকে সেনানিবাসে নিয়ে গিয়ে দুই সপ্তাহের মৌলিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।