আর মাত্র কয়েকদিন, তারপর সারাদেশ মেতে উঠবে ঈদুল ফিতরের উৎসবে। ঈদ উদযাপনে গত বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) থেকে বাস, ট্রেন ও লঞ্চসহ নানানভাবে ঢাকা ছাড়ছে লাখ লাখ মানুষ। তাতে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে রাজধানী ঢাকা শহর।
শনিবার (৬ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন, গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল এবং সদরঘাট লঞ্চঘাট ঘুরে দেখা গেছে, সব জায়গায় যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। কমলাপুরের ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে প্রথম দিকে কয়েকটি ট্রেন ছাড়তে দেরি হলেও পরেরগুলো যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। তবে বিভিন্ন গন্তব্যের বাসগুলো নির্ধারিত সময়েই ছেড়ে যাচ্ছে।
প্রতিবছর ঈদ এলেই ঢাকা থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ গ্রামের বাড়িতে যায়। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা এসব মানুষের প্রকৃত সংখ্যা বলা কঠিন। তবে ধারণা করা হচ্ছে এবার প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে বৃহত্তর ঢাকার প্রায় দেড় কোটি মানুষ ঢাকা ছাড়বে। বিপুলসংখ্যক ঈদ যাত্রীর মধ্যে ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ৯০ লাখ মানুষ সড়ক পথে যাবে। অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ মানুষ নৌ ও রেলপথে ঢাকা ছাড়বে। নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এবার ঈদের আগে ও পরে ছুটি থাকায় অনেকেই বাড়ি যাচ্ছেন। ঈদের ছুটি শুরু হলে স্বাভাবিকভাবেই বাস-ট্রেনসহ সবখানেই যাত্রীদের চাপ বাড়বে। এজন্য অনেকে আগেভাগেই পরিবারের সদস্যদের বাড়ি পাঠাচ্ছেন। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অনেকেই ঢাকা ছেড়েছেন। শনিবারও অনেকে বাড়ি ফিরছেন।
ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ আশরাফ ইমাম বলেন, শুক্রবার সকাল থেকেই সড়কে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছি।
সদরঘাট টার্মিনালে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার যাত্রী আমিনুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। পরিবার নিয়ে তিনি পুরান ঢাকায় থাকেন। তিনি বলেন, ঈদের ছুটি বেশি থাকায় আগেভাগেই স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের বাড়িতে রেখে আসতে যাচ্ছি।
এদিকে ঈদ উপলক্ষ্যে ১৩টি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। সেগুলো হলো-গ্যাস সিলিন্ডার অথবা গ্যাসের লাইন, পানির লাইন, সব ধরনের লাইট, ফ্যানের সুইচ, বৈদ্যুতিক প্লাগ বন্ধ করে বের হতে হবে। বাসাবাড়িতে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে ছুটি শেষে বাড়ি থেকে ফিরে এসে দরজা-জানালা খুলে ঘরে জমে থাকা গ্যাস বের না হওয়া পর্যন্ত কোনো অবস্থাতেই গ্যাসের চুলা জ্বালানো কিংবা বৈদ্যুতিক সুইচ অন করা যাবে না। বাসাবাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে। আগে বসানো সিসি ক্যামেরা সচল আছে কিনা পরীক্ষা করতে হবে। বাসার চারপাশে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। নগদ টাকা কিংবা স্বর্ণালংকার ব্যাংক কিংবা নিকটাত্মীয়দের কাছে নিরাপদে রাখতে হবে। রাতে কিংবা দিনে একসঙ্গে মুখে মাস্ক এবং মাথায় ক্যাপ পরিহিত অপরিচিত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গতিবিধি নজরদারি করতে হবে। প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিতে হবে।
নির্দেশনার মধ্যে আরও আছে-মোটরসাইকেল চুরি রোধে এলার্ম লাগাতে হবে। এতে কেউ মোটরসাইকেল স্পর্শ করলেই এলার্ম বেজে উঠবে। লক করার কাজে স্টিলের তৈরি মেরিন এংকর চেইন ব্যবহার করতে হবে। মোটরসাইকেলে জিপিএস ট্র্যাকার লাগাতে হবে এবং চাকাতে উন্নত মানের ডিস্ক লক ব্যবহার করতে হবে। দেশের কিংবা বিদেশের কোনো আইপিএস কিংবা বিসিএস কর্মকর্তা, সেনা কর্মকর্তা ইত্যাদি পরিচয়ে ফেসবুকে পাঠানো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করলে প্রতারিত কিংবা ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হতে পারেন। সেজন্য এ ধরনের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করা উচিত হবে না। যার নাম-ঠিকানা আপনার জানা নেই এমন অপরিচিত ব্যক্তির দেওয়া ভিডিও কল গ্রহণ করবেন না। এরূপ ভিডিও কলে পাঠানো অশ্লীল ছবি কিংবা ভিডিও রেকর্ড করে আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করতে পারে।
ডিএমপির নির্দেশনায় আরও রয়েছে-আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কিংবা বিকাশ বা নগদ অ্যাকাউন্ট কোনো ব্যক্তি বন্ধ করতে পারে না। এসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার ভয় দেখিয়ে আপনার কাছ থেকে অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড কিংবা পিন নম্বর বিভিন্ন কৌশলে বারবার চাইতে পারে। এ ধরনের ফোনকল পেয়ে কোনো অবস্থাতেই পাসওয়ার্ড কিংবা পিন কোড দেওয়া যাবে না। ভুল করে আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা গিয়েছে-এমন ফোনকল পেলে যাচাই না করে বিশ্বাস করবেন না। লটারি জিতেছেন কিংবা বিদেশ থেকে দামি উপহার কিংবা ডলার পাঠানো হবে এরূপ মোবাইল কল পেয়ে বিশ্বাস করবেন না। এয়ারপোর্ট কাস্টমসে কিংবা এনবিআর অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা পরিশোধ করতে হবে জানিয়ে প্রতারকরা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। কোনো অবস্থাতেই এ ধরনের লোভে পড়বেন না।
জনসাধারণের প্রতি ডিএমপির আরও অনুরোধ-অত্যন্ত দামি ধাতুর তৈরি সীমান্ত পিলারে বিনিয়োগ করে কোটি কোটি টাকা লাভ করা যাবে এরূপ প্রলোভনে বিশ্বাস করবেন না। প্রতারকরা নকল পিলার দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। বাস্তবে এ ধরনের কোনো পিলার নেই। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো ইত্যাদি আইডিতে আত্মীয়, বন্ধু কিংবা পরিচিত ব্যক্তির বিপদে পড়ে জরুরি টাকা পাঠানোর অনুরোধ পেলে ওই ব্যক্তির মোবাইল নম্বর কিংবা তার পরিবারের লোকজনের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ না করে কোনো টাকা পাঠাবেন না। মোবাইল চুরি করে কিংবা বিভিন্ন আইডি হ্যাক করে এ ধরনের অনুরোধ পাঠানো হয়। সস্তায় হোটেল ভাড়া করা, বিমানের টিকিট কাটা কিংবা কম খরচে ইউরোপ, কানাডা কিংবা আমেরিকায় পাঠানোর প্রস্তাব কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কিংবা অ্যাপসে পাঠালে বিশ্বাস করবেন না।