রাজনীতি

উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপি ও জামায়াতের

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট বর্জনের ধারাবাহিকতায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তবে দলটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হওয়ার পর গত রাতে।

সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, বিএনপি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে এবং প্রশাসন ও পুলিশের একপেশে ভূমিকার জন্য এর আগেও জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করেছে। এখনও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি। বিদ্যমান পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ায় আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। বিএনপি ৮ মে থেকে শুরু হওয়া সকল ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বর্তমান সরকারের আমলে দেশে জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীদেরই নির্বাচন কমিশন বিজয়ী ঘোষণা করে। প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী দলের প্রার্থীদের নানাভাবে হামলা, মামলা ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়া এবং নির্বাচনী প্রচারে হামলা এবং শারীরিক আক্রমণসহ পথে পথে বাধা দেওয়া হয়। অনেককেই মনোনয়নপত্র জমা দিতেও দেওয়া হয়নি।

এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে জামায়াতে ইসলামীও সিদ্ধান্ত বদল করেছে। দলটির আগের অবস্থান ছিল, কেন্দ্রীয়ভাবে ভোটে অংশ নেওয়ার ঘোষণা না দিয়ে যেসব উপজেলায় জয়ের সম্ভাবনা আছে, সেখানে দলের নেতারা স্থানীয়ভাবে প্রার্থী হবেন। তবে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে গত রোববার জামায়াতের কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়, দলের কেউ প্রার্থী হতে পারবেন না। যারা আগেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হবে। জামায়াতের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম সমকালকে বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে জামায়াত। এ কারণে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি, উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নেবে না।

সিদ্ধান্ত বদলের আগে দলটির শতাধিক নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান এবং তিন শতাধিক নেতা ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। অনেকে গণসংযোগও শুরু করেন। ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টারও সাঁটান কয়েকজন জামায়াত নেতা। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের অন্তত ৪০ উপজেলার জামায়াত নেতারা ভোটের মাঠে ছিলেন। একই চিত্র ছিল উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, বগুড়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অর্ধশতাধিক উপজেলায়। এসব এলাকায় দলটির ‘ভোট ব্যাংক’ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে দলের নির্দেশনার পর জামায়াত নেতারা নির্বাচন থেকে নীরবে সরে গেছেন। সোমবার ছিল প্রথম পর্বের ১৫২ উপজেলায় প্রার্থী না হতে নেতাদের নির্দেশ মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। কেন্দ্রীয় জামায়াতের সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা প্রত্যাহার করে নেবেন।

জামায়াত বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা বললেও দলটির নেতারা গত ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন, উপনির্বাচনে অংশ নেন। দুটি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা জয়ীও হয়েছেন। উপজেলা নির্বাচন দলীয়ভাবে হলেও এবার দলীয় প্রতীক দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।