কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) থেকে:
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে একটি কার্বণ মিল ও ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা তৈরির অনুমোদনহীন কারখানা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। কারখানা দুটির মালিক হিরু মুন্সী। তিনি আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। আগে বিএনপি করলেও তিনি দল পরিবর্তন করে এবার আওয়ামী লীগের পরিচয়ে বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করতে যাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের জয়নগরে অবস্থিত হিরু মুন্সীর সীসা কারখানার উত্তর পাশে অনুমোদনহীন ওই কারখানা এবং তার মালিকানাধীন কার্বণ ফ্যাক্টরী বন্ধের দাবীতে এলাকাবাসী মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে বক্তারা ওই দুই কারখানার কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা তুলে ধরেন। পুরাতন ব্যাটারী পুড়িয়ে সীসা তৈরি থেকে সৃষ্ট ধোঁয়ায় বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগে পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হচ্ছে বলে কারখানা দুটির আশ-পাশের লোকজন উল্লেখ করেন। ব্যাটারির এসিড বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে পাশের ক্ষেতে গিয়ে পড়ছে। এতে ওই এসিড মিশ্রিত ঘাস খেয়ে গত কয়েক মাসের মধ্যে স্থানীয়দের ৩৩ টি গরু মারা গেছে বলে মানববন্ধনে উল্লেখ করা হয়।
জয়নগর গ্রামের কৃষক আমিনুর রহমান, মোঃ লিমন শেখ, বাহারুল শেখ জানান, কার্বনের ধোঁয়ায় তাদের চোখ লাল হয়ে গেছে। এছাড়া পুরাতন ব্যাটারী পুড়িয়ে সীসা তৈরি থেকে সৃষ্ট ধোঁয়ায় বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে আশ-পাশের লোকজন। এদিকে এসিডের বিষাক্ততায় শত শত একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। মাঠের ফসল এসিডের বিষাক্ততায় নষ্ট হচ্ছে, মারা যাচ্ছে জলাশয়ের মাছ।
বিষয়টি এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ফ্যাক্টরির মালিক হিরু মুন্সীকে জানালে তিনি তাদেরকে উল্টো ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে এ সময় অনেকে অভিযোগ করেন।
মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন চুন্নু শেখ, সোলেমান শেখ, আব্দুল্লাহ, বাবুল শেখ, কাশেদ শেখ প্রমুখ।
কাসেদ শেখ বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ তুলে একটি গাভী কিনেছিলাম। গাভীটি পাঁচ মাসের গর্ভবতী ছিল। এসিড মিশ্রিত ঘাস খাওয়ার জন্য গাভীটি মারা গেছে।
প্রসঙ্গত, হিরু মুন্সীর ‘গোল্ডেন কার্বণ ফ্যাক্টরী’ নামের কার্বণ মিলে পাটকাঠি পুড়িয়ে কার্বন বা পাটকাঠির ছাই উৎপাদন করা হয়। এ পাটকাঠি পুড়ানোর সময় এলাকায় প্রচন্ড রকম ধোঁয়া এবং বাতাসে ছাই মিশ্রিত হয়ে পরিবেশ দূষিত হয়। ধোঁয়া এবং ছাইয়ের কারণে আশপাশের এলাকায় শ্বাসকষ্ট, যক্ষ্মা, এ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে লোকজন। এছাড়া বাচ্চাদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে। এ কারণে জয়নগর, কানখরদি, বেড়াদী, কেরশাইল, সেরাপুর, প্রেমতারাসহ নয় গ্রামের লোকজন কার্বন ফ্যাক্টরি বন্ধের দাবিতে ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয়রা। ওইদিন ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মাঝকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কে জয়নগর বটতলা নামক স্থানে এ কর্মসূচি পালন করেন।
এছাড়া ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সাতৈর ইউনিয়নের জয়নগর বট তলা সংলগ্ন হিরু মুন্সীর কার্বন ফ্যাক্টরি সংলগ্ন তার মালিকানাধীন একটি সীসা কারখানাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। আদালত পরিচালনা করেন ফরিদপুর জেলা নেজারত ডেপুটি কালেক্টরেট (এনডিসি) ও নির্বাহী হাকিম মো. মুজিবুল ইসলাম। এ সময় ব্যাটারির সাইস্ট্রিক এসিড পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণের দায়ে কারখানাটি সিলগালাসহ উল্লিখিত টাকা জরিমানা করা হয়।
এরপর চলতি বছরের ৫ মার্চ হিরু মুন্সীর মালিকানাধীন ওই অবৈধ সীসা কারখানায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালান বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান। তিনি কারখানাটির মালিক হিরু মুন্সীকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে অবৈধ কারখানাটি বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেন। অবৈধভাবে পুরাতন ব্যাটারি ভেঙে সীসা তৈরি করায় বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর সংশোধিত ২০০৬ এর ৬ ধারায় ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।