মিল্টন সমাদ্দারের ‘চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমে থাকা ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শামসুল হক ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে। এই ফাউন্ডেশন এখন থেকে মিল্টনের আশ্রমে থাকা বৃদ্ধ, অনাথ শিশু ও মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসা সেবার দায়িত্ব পালন করবে।
সোমবার দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার হয়েছেন। এসময়ে তার আশ্রমে থাকা বৃদ্ধ, অনাথ শিশু ও মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি যারা আছেন তাদের শামসুল হক ফাউন্ডেশন থেকে সব ধরনের সেবা প্রদান করা হবে। শামসুল হক ফাউন্ডেশনের কর্ণধার রোববার ডিবি কার্যালয়ে এসেছিলেন। তাকে অনুরোধ করা হয়েছে মিল্টনের আশ্রমে থাকা ব্যক্তিদের খাওয়া-দাওয়া ও চিকিৎসা সেবা দেওয়ার। তিনি তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
হারুন জানান, সেখানে সার্বক্ষণিক একজন চিকিৎসক থাকবেন। তিনি চিকিৎসা দেবেন। এতে যা খরচ হবে সেই খরচ শামসুল হক ফাউন্ডেশন থেকে ব্যয় করা হবে। তবে মিল্টনের আশ্রমেই ওই ব্যক্তিদের সেবা ও চিকিৎসা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মানবতার ফেরিওয়ালার মুখোশের আড়ালে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার ভয়ংকর ‘সাইকোপ্যাথ’। নিজের বাবাকে পিটিয়ে এলাকা ছাড়া হয়ে ঢাকা শহরে এসে সে সাইকোপ্যাথে পরিণত হয়। (সাইকোপ্যাথি হলো এক ধরনের মানসিক অসুস্থতা। এটি একটি পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার)। ফলে ভয়ংকর সব অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে সে। তার অপকর্মের অভিযোগগুলো সম্পর্কে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তার স্ত্রী মিতু হালদার ও নিয়োগ দেওয়া চিকিৎসককে ডিবিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মিল্টনকে অর্থ সহায়তাকারীদের তালিকা করে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পর্যায়ক্রমে মিল্টনের অপকর্মের সব সহযোগীকেই জিজ্ঞাসাবাদ ও আইনের আওতায় আনা হবে।
মিল্টন সমাদ্দারকে দ্বিতীয় দফায় ৪ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভয়ংকর ‘সাইকোপ্যাথ’ মিল্টন সমাদ্দার
বুধবার (১ মে) রাতে রাজধানীর মিরপুরে অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা-মিরপুর বিভাগের একটি টিম। পরে রাতে তার বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় বিভিন্ন অভিযোগে তিনটি মামলা হয়। সেসব মামলায় মিল্টনকে ৩ দিনের রিমান্ড দেন আদালত।
রহস্যময় মিল্টন সমাদ্দারের ভয়ংকর সব অপকর্মের বিষয়ে তদন্ত করছে ডিবি মিরপুর বিভাগের একাধিক টিম। গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাকে। তবে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করছেন বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে জাল-জালিয়াতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন মিল্টন। তবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির বিষয় অস্বীকার করেছেন। শনিবার রিমান্ডের তৃতীয় দিনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্টরা।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মিল্টনের আশ্রমে কোনো নিবন্ধিত ডাক্তার নেই। তিনি নিজে ডাক্তার সেজেছেন। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক কিশোর বালাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতারণামূলকভাবে আশ্রিতদের বিভিন্ন চিকিৎসা করেন, সেবা দেন, পাশাপাশি এ নিয়ে ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমোতে প্রচার করতেন। এসব ভিডিও ১ কোটি ২০ লাখ ফ্রেন্ড-ফলোয়ারের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে টাকা উপার্জন করতেন মিল্টন।