রাজনীতি

নতজানু বলেই জনগণের স্বার্থে যে স্ট্যান্ড নেয়া দরকার সেটিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, নতজানু সরকার বলেই দেশের জনগণের স্বার্থে প্রকৃতভাবে যে একটা স্ট্যান্ড ( অবস্থান) নেয়া দরকার সেটি নিতে ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী সরকার।

আজ বৃহস্পতিবার ফারাক্কা দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

‘মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর এক মহান প্রতিবাদী নেতা ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ বিরোধী, পাকিস্তান বিরোধী এবং বাংলাদেশের সকল অন্যায় অবিচারের প্রতিবাদ করেছেন। আজকের এই দিনে স্বভাবজাতভাবেই তার যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা, বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাসা, স্বাধীনতার নিরাপত্তায় দেশের জনগণকে সম্পৃক্ত করে তিনি ফারাক্কা মার্চ করেছিলেন’ জানান মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ জন্মের পর থেকেই আমরা লক্ষ্য করছি আমাদের যে পার্শ্ববর্তী সরকার তারা সবসময় আমাদের কন্ট্রোল করার প্রচেষ্টা চালায়। শুধু ফারাক্কা নয়, গঙ্গার পানি নয়, বাংলাদেশের ১৫৪টি নদীতে পানি দিতে তারা গড়িমসি করে যাচ্ছে। এই সমস্যার সমাধান করেনি, করা যাচ্ছে না।

সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, তিস্তা নদীর পানি বন্টন, এই করছি, এই হচ্ছে এমন করে সময় শেষ করছে সরকার। এই যে ব্যর্থতা, এর মূল কারণ হচ্ছে সরকারে যারা আছে তারা পুরোপুরিভাবে একটা নতজানু সরকার। দেশের জনগণের স্বার্থে প্রকৃতভাবে যে একটা স্ট্যান্ড নেয়া দরকার সেটি নিতে তারা ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ তারা দুর্বল।

‘ফারাক্কা দিবস মনে করিয়ে দেয় জনগণের শক্তির কাছে বড় কোনো শক্তি নেই।’

বাংলাদেশের মানুষকে তার অধিকার আদায়ের জন্য নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছি। গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য আমরা সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি। আমরা বহু রাজনৈতিক দল একসাথে সংগ্রাম করছি, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য। এ সংগ্রামে অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন, অনেকেরই অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে। এদেশের নেত্রী, জনগণের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যে মামলা দিয়ে কারাগারে আটকে রেখেছে সরকার। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মিথ্যে মামলা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করেছে সরকার। ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে সরকার।

২৮ অক্টোবরের পর তিন দিনের মধ্যে আমাদের ২৭ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল- এমন তথ্য জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো সেই নিপীড়ন নির্যাতন চলছে। যারা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করছেন তাদের সাজা দেয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকার দখলদারী সরকার। তাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে, স্বার্থ আর প্রভুদের স্বার্থ রক্ষা করা। বিশেষ একটা দায়িত্ব নিয়ে এ সরকার ক্ষমতা দখল করে আছে। এরা নির্বাচিত নয়, এরা নির্বাচন করে না। এরা জানে, নির্বাচন করলে তাদের একটা ভূমিধস পরাজয় হবে। বিভিন্ন কৌশলে ইরান নির্বাচন দেখিয়ে ক্ষমতায় টিকে আছে।

দেশকে একটা মাফিয়া রাষ্ট্র হিসেবে তৈরি করা হয়েছে- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, যারা সরকারের গুণগান করে, তাদের উদ্দেশে হলো, এই সরকার টিকে থাকলে তাদের লুণ্ঠন, পাচার অব্যাহত থাকবে। তারা বেনিফিশিয়ারি হবে। এমন একটি বেনিফিশিয়ারি গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছে।

ভাসানী অনুসারী পরিষদ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। ভাসানী পরিষদের আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সহ-সভাপতি তানিয়া রব, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব ড. আবু ইউসুফ সেলিম, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ প্রমুখ।