বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক তার স্বাধীন সত্তা হারিয়ে ফেলেছে। মেরুদণ্ড সোজা রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারছে না। বাইরে থেকে আরোপিত সিদ্ধান্ত কার্যকর করার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন নিয়োন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।’
আজ শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংকিংখাতে নৈরাজ্য এমন পার্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, আইএমএফের পরামর্শক্রমে ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হচ্ছে। তবে যথেষ্ট পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় একীভূতকরণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। জোর করে ব্যাংক একীভূতকরণ টেকসই হতে পারে না।’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সুশাসনের অভাবে সামগ্রিক অর্থনীতিকে সাপোর্ট দেওয়ার সক্ষমতা ব্যাংকিং সেক্টর হারিয়েছে। জনগণ ব্যাংকিংখাতের ওপর আস্থা হারিয়েছে। ব্যাংকে গচ্ছিত আমানত নিরাপদ রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারছে না। ফলে আমানতকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যাদের কারণে ব্যাংকিংখাতে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকছে। ব্যাংকের খেলাপি ঋণের সঠিক তথ্য জনগণ জানতে পারছে না।’
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘ঋণ জালিয়াতি, ঋণখেলাপি, অর্থপাচার বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় কালো দাগ। ব্যাংকের টাকা মেরে দিয়ে ব্যক্তি বিশেষের আরাম আয়েশ, ভোগ-বিলাস দেশের অর্থনীতিতে ক্যানসারের আকার ধারণ করেছে। আর্থিকখাতের এই ক্যানসারের চিকিৎসা না করে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল বা ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর সুফল পাওয়া যাবে কি না, তা বুঝতে আমাদের আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘তবে দেশের আর্থিক খাতের অস্থিরতার দায় বাংলাদেশ ব্যাংক এড়াতে পারে না। নানা আইনি সুবিধা দিয়ে ব্যাংকগুলোকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। সুশাসন ও জবাবদিহির ঘাটতি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে খাদের কিনারায় নিয়ে গিয়েছে। তাই ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চলমান সংকট উত্তরণের যে প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে তার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা খুবই জরুরি।’
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘ঋণ জালিয়াতকারী ও অর্থ পাচারকারীদের সামাজিকভাবে বর্জন করতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের নাগরিক সুবিধা সীমিত করা উচিত। আমরা দেখি ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীরা এয়ারপোর্টে ভিআইপি হিসেবে যাতায়াত করছে। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা কোনোভাবে চিহ্নিত আর্থিক দুষ্কৃতিকারী।’