দেশবার্তা

শিলাস্তির গ্রামের বাড়িতে গিয়ে যা দেখা গেল

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার শিলাস্তি রহমানের সঠিক তদন্তসাপেক্ষে শাস্তি চেয়েছেন তার চাচাতো দাদা (বাবার চাচা) বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম মিয়া।

শনিবার শিলাস্তি রহমানের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধবুরিয়া ইউনিয়নের পাইসানা গিয়ে দেখা যায় পুরো বাড়ি ফাঁকা।

সেখানে শিলাস্তিরদের পাশাপাশি দুটি বাড়ি রয়েছে। একটি টিনের ও অপরটি দোতলা বিল্ডিং। টিনের ঘরের ঠিক পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে দোতলা একটি বাড়ি। তবে সেই বাড়ির ভেতরে নেই কোনো আসবাবপত্র।

শিলাস্তির দাদারা ছিল ৬ ভাই। শিলাস্তির দাদাসহ বাকি দুই ভাই স্বাধীনতার পর ঢাকায় চলে আসেন।

শিলাস্তির দাদা (দাদার ভাই) বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম মিয়া বলেন, শিলাস্তি তার বড় ভাইয়ের মেয়ে। তারা দুই বোন। এর মধ্যে শিলাস্তি বড়। তার বাবা আরিফুর রহমান পাট ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় বসবাস করে।

তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই তারা ঢাকার উত্তরায় বসবাস করে। মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়িতে এলেও দুই-একদিন পর আবার চলে যেত।

তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই শিলাস্তির চলাফেরা উচ্ছৃঙ্খল। বাড়ির বাইরে দিনের পর দিন সময় কাটানোর কারণে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে আমার চাচাতো নাতনি শিলাস্তি জড়িত থাকলে সঠিক তদন্তসাপেক্ষে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আনোয়ারুল আজিম আনারকে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শিলাস্তি রহমান নামে এক তরুণীর নাম উঠে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলছে, শিলাস্তি এ হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের গার্লফ্রেন্ড। শাহীন যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেন এবং তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রেই থাকে। তবে তিনি মাঝে মধ্যেই বাংলাদেশে এলে শিলাস্তিকে নিয়ে কলকাতায় প্রমোদভ্রমণে যেতেন। সেখানে কিছু দিন থেকে ফের দেশে চলে আসতেন। তাদের মধ্যে কয়েক বছর ধরেই প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। শিলাস্তির আরেক বান্ধবী অরিশাকে নিয়েও একাধিকবার কলকাতায় যান আক্তরুজ্জামান শাহীন।

শাহীন ও শিলাস্তি রহমানের কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনে অবস্থানের একটি ভিডিও ফুটেজ বেরিয়ে এসেছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ৩০ এপ্রিল ট্রলিব্যাগসহ আমানউল্লাহ ও শিলাস্তি রহমান বেরিয়ে আসছেন। এ সময় দুজন বেশ তাড়াহুড়ো করছিলেন। ঠিক কী কারণে তারা সেখানে যান, এ বিষয়ে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি।

ডিবি পুলিশের সূত্র বলছে, ঢাকা থেকে ৩০ এপ্রিল শাহীন ও আমানুল্লাহর সঙ্গে প্লেনে কলকাতায় যান শিলাস্তি রহমান। কলকাতার নিউটাউনের বহুতল আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেনসের যে ফ্ল্যাটে খুন হন আনোয়ারুল আজিম আনার, সেখানেই ছিলেন শিলাস্তি। পরে ১৫ মে হত্যার মূল দায়িত্ব পালনকারী চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহর সঙ্গে একই ফ্লাইটে ঢাকায় ফেরার পর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে আটক হন।

গত ১২ মে ভারতে যান এমপি আনার। কলকাতার ব্যারাকপুরসংলগ্ন মণ্ডলপাড়ায় বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন তিনি। গত ১৩ মে চিকিৎসার কথা বলে বাসা থেকে বের হন আনার। পরে কলকাতার দমদম বিমানবন্দর লাগোয়া নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন এমপি আনার। বাসাটি খুনিরা ভাড়া নেয় ১১ মাসের জন্য। এমপি খুনের ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে গত ২২ মে। ওই দিনই রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন (২৪) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। এ ছাড়া ভারতে একটি হত্যা মামলা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত আটজনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ। এদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। তারা হলেন— চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ আমান, তার চাচাতো ভাই তানভীর ভূঁইয়া ও শাহীনের গার্লফ্রেন্ড শিলাস্তি রহমান। তারা ডিবিতে রিমান্ডে আছেন। শুক্রবার আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ ছাড়া কলকাতা পুলিশের কাছে গ্রেফতার আরেক আসামি জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে ভারতের পুলিশ। অপর চারজন পলাতক রয়েছে। তাদের মধ্যে সিয়াম নেপালে, শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে এবং মোস্তাফিজ ও ফয়সাল বাংলাদেশেই রয়েছে।