পুলিশের সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের নিয়ে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ধারাবাহিকভাবে আংশিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ঢালাও’ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে বলে দাবি করে প্রতিবাদ জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় এই বাহিনীর সদস্যদের সমিতি। এ ক্ষেত্রে ‘অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন ও সাংবাদিকতার নীতিমালা যথাযথভাবে’ অনুসরণের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএসএ)।
পুলিশের বিসিএস ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের সংগঠন বিপিএসএর সভাপতি ও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম এবং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল আজ শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সতর্কবার্তা দেন।
সংবাদ প্রকাশে সতর্কতার পাশাপাশি বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ পুলিশের ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধে অবদান, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ভূমিকা ও করোনাকালে পুলিশের নানা গৌরবময় কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূমিকা বিশ্বে ‘রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃত বলেও উল্লেখ করা হয়।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবার এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া ও তার পরিবারের সম্পদ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করার পর গত ৪ মে সপরিবারে দেশ ছাড়েন বেনজীর। আছাদুজ্জামান মিয়াও এখন দেশের বাইরে আছে।
বিপিএসএর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম ব্যক্তিগত আক্রোশ ও নিজস্ব স্বার্থ রক্ষায় কোনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবমাননাকর নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার করছে, যা সাংবাদিকতার নীতিমালাবিরোধী। এমতাবস্থায়, কী কারণে, কার উদ্দেশ্য হাসিল এবং কার নির্দেশ (ম্যানডেট) বাস্তবায়নের জন্য কতিপয় সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের কুৎসা রটনায় লিপ্ত, সেই প্রশ্ন উত্থাপন করা অযৌক্তিক নয়।
পুলিশ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বদা ‘জিরো টলারেন্স’ (শূন্য সহনশীলতা) নীতি অনুসরণ করে আসছে দাবি করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হয় না। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সংবাদমাধ্যম সমাজের দর্পণ। সংবাদমাধ্যমের গঠনমূলক সমালোচনাকে বরাবরই স্বাগত জানানো হয়। কিন্তু কোনো খণ্ডিত বা আংশিক সংবাদ প্রকাশের তারা প্রতিবাদ করতে চান। সংবাদমাধ্যমে কোনো ঘটনার সামগ্রিক চিত্র উঠে আসুক, সত্য উন্মোচিত হোক। প্রতিবেদন হোক সত্যাশ্রয়ী ও বস্তুনিষ্ঠ।
পুলিশের সমিতি বলেছে, ‘কোনো এক রহস্যময় কারণে এক শ্রেণির সংবাদমাধ্যম অতি সুকৌশলে পুলিশকে বিতর্কিত করে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর অপচেষ্টায় মেতেছে, যা সৎ সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধকারী অপসাংবাদিকতারই নামান্তর বলে পরিগণিত হয়। সংবাদমাধ্যমের এ ধরনের একপেশে আচরণ সাধারণ পাঠকের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। এ ধরনের অপসাংবাদিকতা পুলিশের সৎ, নিষ্ঠাবান, পেশাদার ও দেশপ্রেমিক সদস্যদের মনোবল ধ্বংসের অপপ্রয়াস বলে প্রতীয়মান হয়, যা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।’
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এ ধরনের অপপ্রচার সন্ত্রাসীদের উৎসাহিত করা এবং দেশবিরোধী চক্রান্তের অপকৌশল কি না, তা বিবেচনার দাবি রাখে। ফলে, পুলিশি সেবা প্রত্যাশী মানুষ, তথা দেশ ও জাতি সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। পুলিশ কখনোই সংবাদমাধ্যমের কাছে এ ধরনের অপেশাদারি সাংবাদিকতা প্রত্যাশা করে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। এতে জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পুলিশসংবাদমাধ্যমপুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনঢাকা বিভাগবাংলাদেশ পুলিশ