দিনে দিনে দেশের ক্রিকেট আর ছোট্ট খোকাটি নেই। অনেক বড় হয়েছে। তার পরও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মঞ্চে গেলে লেজেগোবরে হয়ে ফিরতে হচ্ছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবার হৃদয়ে রক্ত ঝরিয়েছে। ২০২৩ সালের ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ যেমন ক্রিকেট অনুরাগীদের ভেতরে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছিল একই কাণ্ড ঘটিয়েছেন এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
গতকাল সকালে ঢাকায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ভিআইপি গেট দিয়ে বেরিয়েছেন রিয়াদ, তাসিকন, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, শেখ মাহাদী, তানজিম সাকিব, মুস্তাফিজুর রহমান, তানজিদ তামিম, তাওহীদ হূদয়, রিশাদ হোসেনরা। দূর থেকে তাদের দেখা মাত্রই বিমানবন্দরে আসা অন্যান্য লোকজন গালমন্দ করলেন।
বিমনাবন্দরে যাত্রী পৌঁছে দিতে কিংবা যাত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে আসা অপেক্ষমাণ আত্মীয়স্বজনদের মুখটা কালো হয়ে গেল বাংলার ক্রিকেটারদের দেখে। কেউ কেউ বলেই ফেললেন, ‘টাইগার না বিড়াল।’ অন্য জন বললেন, ‘আরে রাখ ব্যাটা। বিড়ালেরও শক্তি থাকে।’ দর্শকের এমন মন্তব্য সহজেই অনুমেয় যে সাধারণ মানুষের মধ্যে কতটা কষ্ট। আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন তারা।
আরেক দর্শকের কথা, ‘আমরা আফগানিস্তানকে হারালে সেমিফাইনালে যেতে পারব কি পারব না, সেটা পরের কথা। আমরা ম্যাচটা জেতার মধ্যে ছিলাম। মুঠোয় থাকা সেই ম্যাচটা ছেড়ে দিয়ে এসেছি। ক্রিকেটাররা ম্যাচটা ছেড়ে দিয়েছে। এই ক্রিকেটাররা মুখ দেখায় কীভাবে।’ মুখ দেখানোর অবস্থা ছিলও না। কাল বিমানবন্দরে অতিমাত্রায় হইচই না হলেও ক্রিকেটাররা খুব সহজেই বিমানবন্দর থেকে কালো কাচঘেরা নিজ নিজ গাড়িতে করে দ্রুত গতিতে মূল সড়কে উঠে পড়েন।
বিশ্বকাপ ব্যর্থতার দায়ভার মাথায় নিয়ে ঘরে ফেরা দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন মনে করেননি। তিনি নিজেকে আড়াল করেছেন। আবার কারো সঙ্গে সেলফিও তুলেছেন শান্ত। কথা বলতে পাঠানো হয়েছিল তাসকিন আহমেদকে। কিন্তু কেন? সহঅধিনায়ক কথা বলতেই পারেন, অধিনায়ক কেন কথা বলবেন না। দেশের মাটিতে ফেরার পর অধিনায়ক নিজে কথা বলবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। তার কাছ থেকেই তো সবাই শুনতে চাইবে। তিনি কেন লুকিয়ে চলে যাবেন। বিসিবি কীভাবে এই সিদ্ধান্ত দেয়। এসব নিয়ে বিসিবিরও কোনো পরিকল্পনা নেই নাকি কেয়ার করেন না কর্মকর্তারা। তাসকিন কথা বলেছেন, আর বাকি ক্রিকেটাররা যে যার মতো চলে গেছেন। ক্রিকেটারদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। এখন যেহেতু ক্রিকেট দলের ক্যাম্প নেই তাই বিসিবি ছুটি দিয়েছে।
দল দেশে ফিরলেও ফেরেননি লিটন, সৌম্য, আফিফ হোসেন কানাডায় গেছেন। তারাও ছুটিতে গেছেন। দলের বাজে পারফরম্যান্স হলে দলের সঙ্গে দেশে ফেরার বাধ্যবাধকতা নেই। ছুটি থাকলে যে কেউ ছুটিতে থাকতে পারে। লিটন সৌম্য সেটাই করেছেণ। যুক্তরাষ্ট্রে থেকে গেছেন। তারা কবে ফিরবেন সেটি চূড়ান্ত নয়। তবে আপাতত ছুটি কাটাবেন। প্রশ্ন উঠছে এত বাজে পারফরম্যান্সের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাতাসে তারা ফুরফুরে মেজাজে কীভাবে ঘুরে বেড়াবেন। দেশের ক্রিকেট অনুরাগীরা সমালোচনা করছেন লিটন-সৌম্যদেরকে। আর যুক্তরাষ্ট্রে খেলা শেষে মাঠ থেকে বেরিয়েও প্রবাসী বাঙালিরাও কম সমালোচনা করেননি। চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে, পকেটের ডলার খরচা করে, দূরদূরান্ত থেকে ছুটে গিয়েছেন স্টেডিয়ামে দেশকে সমর্থন দিতে। সাকিব, লিটন সৌম্যরা এত বাজে খেলেছেন তা মুখে বলার মতো নয়।
সৌম্য ২ ম্যাচ খেলেছেন, এক ম্যাচে ডাক মেরেছেন তিনি। ডাক মেরে সর্বোচ্চ ডাক মারা রেকর্ড লজ্জার রেকর্ড গড়েছেন। আরেকটি ম্যাচ ১০ রান করেছেন। এই হলো সৌম্য সরকারের এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স। লিটন দাস, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সব ম্যাচ খেলেছেন। এই ৭ ম্যাচের মধ্যে ১৩৯ রান সংগ্রহ করেছেন। গড়ে ২৩.১৬ রান। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সব ম্যাচে যদিও ৪৯ বল খেলে ৫৪ রান করলেও এই ম্যাচ নিয়েই ছিল সবচেয়ে বেশি সমালোচনা। অন্যরা যাওয়া আসার মধ্যে থাকলেও লিটন ফিফটি করেছিলেন।