অবৈধ অভিবাসী মোকাবিলার বিষয়ে উদাহরণ দিতে গিয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে করা মন্তব্যের জন্য ভুল স্বীকার করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার। এমনকি এ নিয়ে তিনি যে মন্তব্য করেছেন তা আনাড়ির পর্যায়ে বলেও জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন।
যুক্তরাজ্যে জাতীয় নির্বাচনের আগে তার মন্তব্য নিয়ে নিজ দলের বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত লেবার এমপিদের কড়া প্রতিবাদ এবং দেশটির বাংলাদেশি কমিউনিটিতে চলা উদ্বেগের মাঝে তিনি নিজের অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ালেন। সুর পাল্টিয়ে বললেন, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে বাংলাদেশিদের অনেক অবদান আছে। লেবার পার্টি এবং বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে দৃঢ় বন্ধন রয়েছে। আমার সঙ্গেও বাংলাদেশি কমিউনিটির বন্ধন খুবই শক্তিশালী।’ খবর- ইন্ডিপেনডেন্ট
৪ জুলাই যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে সোমবার ডেইলি সান আয়োজিত এক নির্বাচনী বিতর্কে যোগ দেন স্টারমার। অবৈধ অভিবাসী বিষয়ে বর্তমান সরকারের ‘রুয়ান্ডা পলিসিকে’ ব্যয়বহুল উল্লেখ করে ক্ষমতায় গেলে এই নীতি বাতিলের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, দল ক্ষমতায় গেলে তার সরকার অভিবাসীরা যেখান থেকে এসেছে, সে দেশেই ফেরত পাঠাবে। বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘এ মুহূর্তে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে আসা মানুষজনকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। কারণ বর্তমান সরকার তেমন ব্যবস্থাও দাঁড় করাতে পারেনি। লেবার পার্টি সরকারে গেলে তাদের (অভিবাসী) ফিরতি বিমানে তুলে দেওয়া হবে।’ উল্লেখ্য, ২০২২ সালের এপ্রিলে রুয়ান্ডা অ্যাসাইলাম প্ল্যান নামের একটি অভিবাসন নীতি প্রস্তাব করেছিল ব্রিটিশ সরকার। এতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে অবৈধ অভিবাসী বা আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের পূর্ব আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় পুনর্বাসনের জন্য স্থানান্তর করা হবে।
তার এ বক্তব্যের জের ধরে তুমুল বিতর্ক চলছে দেশটির রাজনীতিতে। এতে বিপাকে পড়েছেন লেবার পার্টির মনোনয়ন পাওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীরা। ব্রিটেনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অবৈধ অভিবাসী থাকার পরও বাংলাদেশ নিয়ে আলাদা বক্তব্যে স্টারমার নিজ দল ও বাংলাদেশি কমিউনিটির তীব্র সমালোচনার মুখেও পড়েন। এ ইস্যুতে দুদিন আগে পদত্যাগ করেন লেবার দলের ডেপুটি লিডার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাউন্সিলর সাবিনা আখতার। ক্ষোভের মুখে লেবার পার্টি ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হয়।
এ অবস্থায় লেবার এমপি হিসেবে বাংলাদেশ সফরের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমার বন্ধন এতটাই শক্তিশালী যে, লেবার এমপি হিসেবে প্রথমেই বাংলাদেশ সফরে সিলেট ও মৌলভীবাজারে গিয়েছিলাম।
বিবিসি রেডিওর একটি লাইভ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক স্টারমারকে বলেন, তাহলে আপনি যে মন্তব্য করেছিলেন, তা ‘আনাড়িপনা’ ছিল বলে মেনে নিচ্ছেন কিনা। এর জবাবে তিনি বলেন, সেটি বলাই ভালো হবে। আমি কাউকে আক্রমণ করে কথা বলতে চাইনি। শুধুমাত্র আশ্রয়প্রার্থীদের ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলেছিলাম।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজের খবরে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশিদের নিয়ে এমন বক্তব্যে তোপের মুখে এর ব্যাখ্যা দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে স্টারমার। যেখানে তিনি বলেছেন, আমি কাউকে আঘাত দিতে চাইনি। আপনারা যে আমার কথায় কষ্ট পেয়েছেন এ নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।
অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো সহজ করতে গত মে মাসে বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন একটি চুক্তি করে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের অবৈধ অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী মাইকেল টমলিনসন বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির আওতায় আশ্রয় (অ্যাসাইলাম) আবেদন প্রত্যাখান হওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের ‘ফাস্ট-ট্রাক’(দ্রুত) পদ্ধতিতে দ্রুত বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। এছাড়া যারা অপরাধী ও ভিসা নিয়ে দেশটিতে প্রবেশের পর বাড়তি সময় থাকছেন তাদেরও ফেরত পাঠানো সহজ করবে চুক্তিটি।
প্রায় ১১ হাজার বাংলাদেশি ছাত্র গত বছর ভ্রমণ কিংবা কাজের ভিসায় যুক্তরাজ্যে যান। সেখানে তারা বসবাসের জন্য আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন। দেশটিতে প্রাথমিক আশ্রয়ের জন্য তাদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশের আবেদন মঞ্জুর হয়। বাকি ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশির আবেদন খারিজ করে দিয়েছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। আবেদন খারিজ হওয়া এসব আশ্রয়প্রার্থীদের এই চুক্তির আওতায় এখন বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য। এই অভিবাসীরা গত বছরের মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, কর্মী বা ভিজিটর ভিসায় যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর শুধুমাত্র স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় দাবি করেন। এতে আরও বলা হয়, ভিসা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অন্য দেশের মানুষকে যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি দেয়। কিন্তু যুক্তরাজ্যে প্রবেশের পর কেউ আশ্রয়ের আবেদন করলে সেখানে তার অবস্থান অনির্দিষ্ট হয়ে যায়। ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত রেকর্ড ২১ হাজার ৫২৫ জন ভিসাধারী যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের আবেদন করেন যা আগের বছরের তুলনায় ১৫৪ শতাংশ বেশি।