কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া আগামীকাল মঙ্গলবার ‘বাংলা ব্লকেড’-এর পরিবর্তে দেশব্যাপী ছাত্র ধর্মঘট এবং ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান তারা।
আজ সোমবার রাতে রাজধানীর শাহবাগে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ও সরকারকে সময় দেওয়া হয়। এরপর শাহবাগ থেকে অবরোধ তুলে নেন তারা।
আন্দোলনকারীরা জানান, মঙ্গলবার ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি থাকবে না। ছাত্র ধর্মঘট এবং ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করা হবে। বেঁধে দেওয়া সময়ে দাবি আদায় না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন আজ রাজধানীর শাহবাগ, বাংলামোটর, চাঁনখারপুল মোড়, ঢাকা মেডিকেল মোড় ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টানের মোড় অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। এতে প্রতিটি রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট।
আন্দোলনকারীরা পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেন। আজ বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটের দিকে রাজধানী শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মূল গেটের সামনে দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় পার হয়ে কারওয়ান বাজার হয়ে ফার্মগেটের দিকে মিছিল নিয়ে আসেন। ব্যারিকেডে ভেঙে ফেলার সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া’, ‘ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন। পাশে পুলিশ সদস্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
তার আগে দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও বিভাগ থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে মিছিল নিয়ে সংগঠিত হন শিক্ষার্থীরা।
বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শাহবাগে একটি অংশ এসে অবরোধ করেন। বাকিরা বাংলামোটর, ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড় অবরোধ করেন।
চাঁনখারপুল মোড় ও ঢাকা মেডিকেল মোড় অবরোধ করেন ঢাবির শহীদুল্লাহ্ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল ও অমর একুশে হলের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত ও সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নেন।
‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘হাইকোর্ট না রাজপথ? রাজপথ, রাজপথ’ ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা’, ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘আপস না সংগ্রাম? সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া স্লোগানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দেশাত্মবোধক গান, কবিতা পরিবেশন করতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের পূর্বে চার দফা দাবি ছিল। তবে সেটি এক দফায় দাঁড়িয়েছে। তাদের এক দফা দাবি হলো ‘সরকারি চাকুরিতে সকল গ্রেডে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য যে কোটা রয়েছে। সেটাকে ন্যূনতম মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাস করতে হবে।