কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদসহ শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচি পালিত হয়েছে। তাদের এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে অসংখ্য শিক্ষক, অভিভাবক ও আইনজীবী এতে যোগ দেন। এ ছাড়া অনেক সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এতে অংশ নেয়। গণমিছিলে খুলনা, হবিগঞ্জ, নরসিংদী, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুলিশসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের বাধার মুখে পড়ে; অনেক স্থানে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। গত রাতে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য বলছে, সংঘর্ষে খুলনায় এক পুলিশ কনস্টেবল এবং হবিগঞ্জে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক আহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে।
এদিকে গতকাল রাতে নতুন কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-নাগরিকদের
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ এবং ৯ দফা দাবি আদায়ে আজ শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও কাল রবিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আপামর জনসাধারণকে অলিতে-গলিতে, পাড়ায় পাড়ায় সংগঠিত হয়ে কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, মো. মাহিন সরকার, আব্দুল হান্নান মাসউদ, সহ-সমন্বয়ক রিফাত রশীদসহ বেশ কয়েকজন তাদের ফেসবুক পোস্টে নতুন কর্মসূচির ডাক দেন। তারা ফেসবুক লাইভে এসেও এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেন এবং সারাদেশের আপামর জনসাধারণকে কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানান।
ব্যুরোপ্রধান, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
খুলনা : আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গতকাল পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে সুমন ঘরামি নামে একজন পুলিশ কনস্টেবল নিহত এবং অন্তত ২৫ পুলিশ সদস্যসহ শতাধিক আহত হন।
গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দুই পক্ষের সংঘর্ষে নগরীর গল্লামারী থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় শিক্ষার্থী ও পুলিশসহ শতাধিক আহতের খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের ছাত্র শফিক, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র আফরান, খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র ফাইয়াজ, নর্থ ওয়েস্ট বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র রাফিদ, সেন্ট যোসেফ স্কুলের ছাত্র মুগ্ধ, খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ইউসুফ, স্কুলছাত্র জাহিদুল (১৫), মাদ্রাসাছাত্র সৌরভ (১৩), রনির (২০), নীরব (২১) এবং পুলিশ সদস্য সোহাগ, রাজু আহমেদ ও মাজহারুল ইসলাম রয়েছেন। আহতদের মধ্যে ছাত্রীও রয়েছে। আহতদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ হয়েছে। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত একজন ছাত্রী, একজন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩০ জনকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ কনস্টেবল সুমনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেএমপি কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক। নিহত সুমন খুলনা পুলিশ লাইনসে কর্মরত ছিলেন।
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা এলাকাবাসীর সহযোগিতা চেয়ে মাইকে ঘোষণা করেন- খুবির বেশকিছু শিক্ষার্থী সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল এলাকায় আটকা পড়েছেন। আপনারা তাদের উদ্ধার করে খুবি ক্যাম্পাসে পৌঁছে দিন। জানা গেছে, খুবির ৬ ছাত্রী গুলিবিদ্ধ হয়ে খুলনা ক্যাম্পাসে আটকা পড়েন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তাদের সহপাঠীরা অ্যাম্বুলেন্সের জন্য সহযোগিতা চান।
হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত এবং কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন। নিহত মোস্তাক মিয়া (৩২) পিডিবির এক ঠিকাদারের কর্মী বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ফোরম্যান নূর বখত। তিনি সিলেটের টুকেরবাজার এলাকার বাসিন্দা। সংঘর্ষ চলাকালে জেলা আওয়ামী লীগের অফিস ও বিএনপির অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ছাড়া হবিগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য আবু জাহিরের বাসার সামনে থাকা একটি প্রাইভেট কার ও ৯টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল আন্দোলনকারীদের ঘোষিত প্রার্থনা ও গণমিছিলের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা জুমার নামাজের পর খ- খ- মিছিল নিয়ে টাউন হলের দিকে আসতে থাকেন। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে টাউন হল এলাকায় অবস্থান নেন। একপর্যায়ে মিছিলকারীদের সাথে সংঘর্ষ বাধে। শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় তারা পালিয়ে যান। এ সময় টাউন হল রোডে আওয়ামী লীগের অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে রায়ট কার নিয়ে যাওয়ার সময় টাউন মসজিদের সামনে প্রধান সড়কের দুই দিক থেকে শিক্ষার্থীদের ব্যারিকেডের মুখে পড়ে পুলিশ। তখন দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শতাধিক রাউন্ড টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। সংঘর্ষে পুলিশসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হন। আহত শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যান।
পিডিবির ঠিকাদারের কর্মী মোস্তাক মিয়ার মৃত্যু সম্পর্কে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে কিছু জানি না। হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতালের আরএমও মঈন উদ্দিন চৌধুরী জানান, মোস্তাককে আহত অবস্থায় আনা হয়। তার ডান হাতের বগলের পেছনে কিছু অংশের মাংস উড়ে গেছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি গুলির আঘাত। ময়নাতদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে, বলেন এই চিকিৎসক। পিডিবির মেইন লাইন কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ফোরম্যান নূর বখত বলেন, তারা শহরতলির ভাঙ্গাপুল এলাকায় থাকেন। মোস্তাক জুতা কেনার জন্য শহরে যান। দীর্ঘসময় তিনি বাসায় না ফেরায় খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারেন, হবিগঞ্জ আধুনিক হাসাপাতালে একজন মারা গেছেন। পরে সেখানে গিয়ে তারা মোস্তাকের লাশ শনাক্ত করেন।
নরসিংদী : নরসিংদীতে কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তার; শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার গণমিছিলে বাধা দেয় পুলিশসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাধে।
গতকাল বিকাল ৩টায় নরসিংদী সদর প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, দুপুরের আগে থেকেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নরসিংদী উপজেলা মোড় এলাকায় লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেন। পৌনে তিনটা নাগাদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে উপজেলা মোড় এলাকায় প্রবেশ করলে প্রথমেই পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরে সেখানে একে একে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও বাধা দেন। এ সময় সংঘর্ষে আন্দোলনকারীদের অনেকেই আহত হন এবং ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে আসে।
নরসিংদী মডেল থানার ওসি তানভীর গণমাধ্যমকে জানান, বিষয়টি পুরোপুরি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল কেএম শহিদুল ইসলাম সোহাগের সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি মাধবদীর সাইডে আছি, সংঘর্ষের কোনো খবর আমরা পাইনি।
লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গতকাল যুবলীগ-ছাত্রলীগের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। আহতরা স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা যায়। গতকাল দুপুর ২টার দিকে তমিজ মার্কেট এলাকায় সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুর বাসার সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শহরের চকবাজার জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে সাবেক জেলা যুবলীগ সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সালাহ্ উদ্দিন টিপুর নেতৃত্বে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বাজার সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় তারা জয়বাংলা স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের মিছিল শেষেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বাজার ব্রিজ থেকে মিছিল নিয়ে বের হন। মিছিলটি চকবাজার মসজিদের সামনে এলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশের বাধা ভেঙে লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ ঘটনার পর শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
অরিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসান মোস্তফা স্বপন বলেন, পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যারাই উসকানি দিয়ে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শহরের গুরুতপূর্র্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সিলেট : সিলেটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এতে শিক্ষার্থীদের সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে দিয়েছে ছত্রভঙ্গ করছে পুলিশ। তবে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে প্রতিরোধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা জানা যায়নি। গতকাল বিকাল সাড়ে তিনটা নাগাদ থেকে সিলেটের আখালিয়া, মদিনা মার্কেট ও পাঠানটুলা এলাকায় এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর আগে গণমিছিলে যোগ দিতে শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সিলেটের বিভিন্ন জায়গা থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। এতে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঁচ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। এ সময় সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা।
এ ছাড়া বেলা সাড়ে ৩টায় শাবিপ্রবির প্রধান ফটক থেকে একটি গণমিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি সিলেটের আখালিয়ায় মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের সামনে আসলে আনুমানিক বেলা ৪টার দিকে পুলিশ পেছন থেকে টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
অন্যদিকে প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে চলমান এ সংঘর্ষে পুলিশ ৪০-৫০ রাউন্ডের অধিক টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে ঘটনা স্থলের আশপাশে পুলিশ তল্লাশি করে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানা যায়। ঘটনার বিষয়ে জানতে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আসবাহার আলী শেখ ও জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।
ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহে বৃষ্টির মধ্যেই ছাত্র-জনতার গণমিছিলে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। গতকাল বিকাল ৩টার দিকে নগরীর টাউন হল মোড় থেকে এ মিছিল বের হয়। জুমার নামাজের পর নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে গণমিছিলে জড়ো হতে দেখা যায়। কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহের সমন্বয়ক আশিকুর রহমান, আরিফুল হক, আব্দুল্লাহ আল নাকিব প্রমুখ।
নোয়াখালী : প্রচ- বৃষ্টি উপেক্ষা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে নোয়াখালীতে সড়ক অবরোধ করে গণমিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এতে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় (নোবিপ্রবি), নোয়াখালী সরকারি কলেজসহ জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা অংশ নেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে গণমিছিলটি জিলা স্কুলের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
বগুড়া : তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করে গতকাল সাতমাথায় মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। জুমার নামাজের পরপরই ছোট আকারের মিছিল করে সাতমাথার মোড়ে আসতে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। বিকাল ৪টার মধ্যে প্রায় তিন হাজাার বিক্ষোভকারী সাতমাথার সব ক’টি রাস্তায় অবস্থান নেন। এতে অনেক অভিভাবকও অংশ নেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা শহরের সাতটি রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
বরিশাল : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে গণমিছিল করেন বরিশালের শিক্ষার্থীরা। পরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে অবস্থান নিয়ে তারা দুই ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। এর আগে বিএম কলেজের সামনে থেকে গণমিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনের মহাসড়কে অবস্থান নেন। এতে মহাসড়কে যান চলাচলে ধীরগতি দেখা দেয়। পরে শিক্ষার্থীরাই যান চলাচল স্বাভাবিকে কাজ করেন। এ সময় বাস টার্মিনাল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শতাধিক সদস্যকে সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা যায়।
গাইবান্ধা : জুমার নামাজের পর শহরের বড় মসজিদের সামনে শিক্ষার্থীরা সমবেত হন। এরপর তাদের গণমিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের ডিবি রোড হয়ে ১নং ট্রাফিক মোড়ে এসে শেষ হয়।
পিরোজপুর : অবিরাম বৃষ্টি উপেক্ষা করে গতকাল পিরোজপুর শহরের সিও অফিস চত্বর থেকে শিক্ষার্থীদের গণমিছিল শুরু হয়ে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
ভোলা : শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকালে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় ভোলায় দোয়া মাহফিল ও গণমিছিল কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরপর দুপুর ২টার পর শহরের সদর বরিশাল দালান চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।
রংপুর : কোটা সংস্কার আন্দোলনে রংপুরে পুলিশের গুলিতে শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ সকল হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার, আন্দোলনে গ্রেপ্তারকৃত সকল শিক্ষার্থীদের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়। নগরীর পার্ক মোড়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে প্রচ- বৃষ্টির মধ্যেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এ কর্মসূচি পালন করেন। এর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকও।
ফেনী : ফেনীতে বৃষ্টিতে ভিজে শিক্ষার্থী-জনতাকে হত্যা করার প্রতিবাদে ও ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নে গণমিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ নানা পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষজন অংশ নেন।
ঝিনাইদহ : শুক্রবার দুপুরের পর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সামনে থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্র-জনতার গণমিছিল বের করা হয়। মিছিলটি প্রেরণা একাত্তর চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা জানান, তাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।
পাবনা : কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের হত্যার বিচার ও মামলা প্রত্যাহারসহ ৯ দফা দাবিতে ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে শান্তিপূর্ণ গণমিছিল করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
যশোর: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে যশোরে গতকাল শান্তিপূর্ণভাবে গণমিছিল কর্মসূচি পালিত হয়। এতে অনেক শিক্ষার্থীর মায়েরাও সন্তানের সঙ্গে যোগ দেন। কর্মসূচি ঘিরে বিকেল তিনটা থেকে শহরের পালবাড়ি মোড়ে জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা প্রথমে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সারা দেশে নিহত ছাত্রদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে সম্মিলিত দোয়া ও মোনাজাত করেন। এ ছাড়া অন্য ধর্মের শিক্ষার্থীরা তাদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী প্রার্থনা করেন। এ সময় সাধারণ মানুষ, আইনজীবী, সাংবাদিক, অভিভাবক ও অন্যান্য পেশার মানুষ তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। কিছুক্ষণ পর তারা জড়ো হয়ে গণমিছিল শুরু করেন। পালবাড়ি থেকে পুলিশ লাইন রোড হয়ে পুরাতন বিমান অফিস মোড়ে মিছিলটি পৌঁছার পর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ইবি: দেশব্যাপী পুলিশের গুলিতে নিহত, আহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে দোয়া মাহফিল ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় আন্দোলনটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়ন ও বৈষম্যবিরোধী সচেতন শিক্ষক প্রতিনিধিরা সংহতি জানান। শুক্রবার (২ আগস্ট) বেলা ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে ডায়েনা চত্বর, মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিবসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে সমবেত হয় শিক্ষার্থীরা। ঘন্টাখানেক চলে এ আন্দোলন।
রাজবাড়ী : রাজবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে রাজবাড়ী বড়পুল থেকে বিভিন্ন শ্লোগান নিয়ে শিক্ষার্থীরা গণমিছিল বের করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কের শিবতলা এলাকায় বিকাল ৪টায় মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে এবং সড়ক অবরোধ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সময় মহাসড়কের উভয় পাশে কিছু সময়ের জন্য ট্রাক-বাস আটকা পড়ে ও যানজটের সৃষ্টি হয়।
নাটোর : গতকাল বিকালে সদর উপজেলার কাফুরিয়া বাজার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণমিছিল বের হয়। পরে নাটোর-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। এ সময় সড়কের দুই দিকে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ থাকে।
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) : দেশে চলমান কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে চট্রগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে হাটহাজারীতে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। এ সময় উক্ত মহাসড়কে প্রায় আধা ঘণ্টার মতো যান চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে ওই মহাসড়ক ব্যবহারকারী প্রায় হাজার হাজার যাত্রীসাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।